কোথাও মর্যাদা পাচ্ছে না জাপা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দেশে-বিদেশে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় পার্টির ডাক পড়ে না। এমনকি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতেও সরকার তাদের ডাকছে না। শুধু সরকার নয়, তাদের ব্যাপারে বিদেশিদেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই।
দ্বিপাক্ষিক আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক কোনো বিষয়ে বিদেশিদের পাশাপাশি বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগের নিয়ম থাকলেও সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি উপেক্ষিত। কোথাও তারা মর্যাদা পাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় পার্টি সরকারের হাতের পুতুল। সরকার যখন যেভাবে চায় জাতীয় পার্টিকে সেভাবে ব্যবহার করছে। সরকারের ইচ্ছা অনিচ্ছাই জাপার ইচ্ছা অনিচ্ছ। তারা সরকারের করুণার পাত্র আবার কখনো হাস্যকর।
২৬ মার্চ লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশি অনেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। পাননি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও এইচ এম এরশাদ। এক সময়ে রাষ্ট্রপতির হওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেও এখন এরশাদের ভাগ্যে জুটেছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ।
জাতীয় পার্টির প্রতি সরকার ও বিদেশিদের অবমূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি পাতানো বিরোধী দল। তারা সত্যিকারের বিরোধী দল নয়। এ কারণে তারা গুরুত্ব পাচ্ছে না।’
জাতীয় পার্টির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলেও তেমন আগ্রহ নেই। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার। বিদেশিরা গুরুপূর্ণ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ ব্যাক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাত করলেও সাক্ষাত করেন না বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে। এখনও বিদেশিদের যোগাযোগ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এই উপেক্ষা ও সাক্ষাত জাপার জন্য যেমন বিব্রতকর তেমনি অমর্যাদাকর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করদিকেয়াবিসি বলেন, ‘বর্তমান রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি ফ্যাক্টর নয়। শুধু দেশের মানুষ নয় বিদেশিরাও তাদের বিরোধী দল হিসেবে বিশ্বাস করতে চায় না। এ কারণে বেগম জিয়া গুরুত্ব পেলেও গুরুত্ব পান না রওশন এরশাদ ও এইচ এম এরশাদ।
এদিকে, বুধবার বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সফরে আসে চার সদস্যের ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধিদের প্রধান জাঁ লামবার্ট। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। শুধু বৈঠক হয়নি জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সফররত অস্ট্রেলিয়ান সহকারী পররাষ্ট্র সচিব পল রবিলিয়ার্ড।
মঙ্গলবার চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। তারা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও এড়িয়ে গেছেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাপা চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে।