জাপার রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নিজ দলের ওপরই কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের। সরকারের ইচ্ছাকেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের ওপর। জনমতের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্ব রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পদত্যাগ করছে না সরকার থেকে। নেতৃবৃন্দের এসব স্ববিরোধী কর্মকাণ্ড, সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ও অসংলগ্ন বক্তব্যকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এরশাদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। নানা বিপত্তি নিয়ে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনটা জরুরি ছিল। তাই পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে গিয়েছি। এ ব্যাপারে পরে আলাপ-আলোচনা করব। কিন্তু আর নির্বাচন করব না। ভবিষ্যতে রাজনীতিও করব না।
জাপা শীর্ষ নেতাদের কেউ বলছেন, নির্বাচনে যেতে চাইনি। পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছি। কেউ নির্বাচন বর্জনের কথা বললেও কেন হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তা এখনও এক রহস্যই বটে। পরিচালনার প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতাদের অদূরদর্শী বক্তব্যের কারণেও পার্টি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশাল জনগোষ্ঠীর সেন্টিমেন্টের বাইরে অবস্থান নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ টিকে থাকতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে এরশাদের অধীনে আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জামায়াত ইসলামসহ অনেকগুলি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। সেদিন আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে জাসদ নামসর্বস্ব ৬৯ দলীয় জোট গঠন করে নির্বোচনে অংশ নিয়ে এরশাদ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করে। ১৯৯০ সালে গণঅভুত্থানে এরশাদরে পতন ঘটে। এরপর থেকে রাজনীতিতে আ স ম রব নেতৃত্বাধীন জাসদ বিলীন হতে থাকে। শেখ মুজিব সরকারের সময় যে জাসদ সংসদ ও রাজপথে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছিল আজকে তা অনেকটা কাগুজে সংগঠন।
পর্যবেক্ষদের মতে, যে মুহুর্তে হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে সে সময় নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ তাদের নিজের পায়ে কুঠারাঘাত। আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না নিয়ে এরশাদের ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে জাপা ব্যাপক সমালোচিত হয়। অনেকে দল ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে নিস্ক্রিয়। অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন। ফলে উপজেলা নির্বাচনে শুধু ভরাডুবিই নয় বলতে গেলে প্রায় বোল্ডআউট। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত মোটেই ভালো নয়।
রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সরকার ও বিরোধী দলে অংশগ্রহণে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের কাছে চরম বিতর্কিত। তাছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণায় তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকট হয়ে উঠছে।’
তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বয়সের কারণে অবসরের কথা বলেছেন। পার্টির আন্তঃকোন্দলের কারণে নয়। জাপায় কোনো বিভেদ নেই। জাপা ঐক্যবদ্ধ। জাপা সামনে এগিয়ে যাবে, দেশ জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।’