উপজেলা নির্বাচনে যে কারণে ধরাশায়ী মুলাদী উপজেলা বিএনপি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ গত ১৫ মার্চ হয়ে গেল মুলাদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বির্তক থাকলেও নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তরিকুল হাসান খান মিঠুকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। এ উপজেলায় মুলতঃ নির্বাচন হয়েছে একমুখী। নির্বাচনে আ’লীগের বিজয়ী প্রার্থী ছাড়াও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি এড. আব্দুল মালেক মিয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মুলাদী উপজেলা নির্বাচনে বেলাল ফকির ও আঃ মজিদ খান নামে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ ছত্তার খান। তবে নির্বাচনের পূর্বেও তিনি আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাধার মুখে ঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারেননি। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিএনপির সমর্থকরা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এই উপজেলা নির্বাচনে।
গত মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার অল্পদিনের মাথায় উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ঐ সময়ের হ্যাভিওয়েট প্রার্থী আঃ মজিদ খান, আ’লীগ প্রার্থী রুহুল আমিন খানকে হারিয়ে অনেক ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। বিএনপি প্রার্থী আঃ ছত্তার খানের চাচাতো ভাই আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী তারিকুল হাসান খান মিঠু। সে তারুণ্যের অভিভাবক হিসাবে মুলাদীতে পরিচিত। অপরদিকে মুলাদী বিএনপিতে চরম গ্র“পিং চলমান। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আঃ রহমান সেলিমা রহমানের গ্র“পের নেতৃত্ব। অপর গ্র“পটি বরিশাল- ৩ থেকে ৪ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব সিরাজুল হক মন্টুর ভাই মোশাররফ হোসেন মংগুর। বারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এছাড়াও মংগু সাধারণ মানুষের সাথে মিশেন আপনমনে। যে কারণে ঐ নির্বাচনী এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সংস্কারপন্থী অভিযোগে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে বরিশাল- ৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রদান করেন। সেই নির্বাচনে সেলিমা রহমান পরাজিত হন। কারণ মোশাররফ হোসেন মংগু মনোনয়ন না পাওয়ায় ঐ এলাকায় বিএনপির ভোটাররা খুশি ছিলেন না। বিএনপির অন্য একটি শক্তিশালী গ্র“প বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এড. জয়নুল আবেদীনের সাথে রয়েছে। এড. জয়নুল আবেদীন বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে ২ বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। এই ৩টি গ্র“প মুলাদী বিএনপিতে সক্রিয়। এই গ্র“পিংয়ের কারণেই ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সেলিমা রহমান পরাজিত হয়েছিলেন। এই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ধরাশায়ীর কারণ এই ত্রিমুখী গ্র“পিং। প্রার্থী মনোনয়নের পূর্বে বিএনপি একীভূত হয়ে প্রার্থী দিতো না প্রায় অনেকেই বিএনপি প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন্ বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আঃ ছত্তার খান নিজে মুলাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হলেও গ্র“পিং নিরসনে কোন উদ্যোগকে নেননি। তারা ৭ ভাই দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এদের ধারণা টাকা দিলেই কর্মী কেনা যায়। এমন অভিযোগ মুলাদীর অনেক বিএনপ নেতাকর্মী। সাধারণ ভোটাররা অভিযোগ করেন, সমন্বয়হীনতার কারণে গত পৌরসভা নির্বাচনে মুলাদীতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হারুনার রশীদ খান পরাজিত হন। মুলাদী উপজেলায় তৃণমুল বিএনপি নেতাকর্মী মনে করেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশ কাটিয়ে সুবিধাভোগীদের সাথে নিয়ে কোন পরিকল্পনা ও পরামর্শ ছাড়া এই নির্বাচন পরিচালনা করায় বিএনপির চরমভাবে ধরাশায়ী হয়েছেন। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে আওয়ামী সমর্থকদের সামনে বিএনপি সমর্থকরা দাঁড়াতেই পারেনি। কারণ বিএনপির সমর্থনে নেতাকর্মী পরিমানের তুলনায় আ’লীগের চেয়ে অনেক কম। আ’লীগের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আঃ ছত্তার খান সকাল ১০টায় ভোট বর্জন করেন। ভোটাররা জানান, তাদের অসাংগঠনিক কর্মকান্ড, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণের কারণে ভোটাররাই তাদের প্রত্যাখান করেছে। এ ব্যাপারে মুলাদী উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদ মাহমুদ বলেন, আমি সাধারণ সম্পাদক হলেও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাকেসহ দলের সিনিয়র নেতাদের জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তবুও এ পরিস্থিতি হওয়াতে আমরা কষ্ট পেয়েছি। বরিশাল- ৩ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন মংগু বলেন, পারিবারিকভাবে প্রার্থী নির্বাচন করায় বিএনপির এ পরিণতি। দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থী দিলে মুলাদীতে বিএনপির জয় নিশ্চিত ছিলো। এই চরম গ্র“পিং ঠেকাতে ঢাকায় অবস্থানকারী মুলাদী প্রবীণ বিএনপি সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে বিএনপির স্থানীয় বিরোধ নিরসনকল্পে গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করলেও বিরোধ নিস্পত্তি হয়নি। ফলে এ করুণ পরিণতি বলে মন্তব্য করে বিএনপি সমন্বয় কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ কুতুবউদ্দিন আহমেদ। মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মীর মহসিনউদ্দিন বলেন বিএনপির মুল নেতাকর্মী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরামর্শ করে নির্বাচন পরিচালনা করলে মুলাদীতে বিএনপি প্রার্থীর এ পরিণতি হতো না। তিনি আরও বলেন, প্রার্থী আঃ ছত্তার খান ও তার ভাইয়েরা নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে কারও পরামর্শ নেয়নি। ফলে মুলাদী বিএনপিকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। মুলাদী উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতা এ.কে.এম বশিরউদ্দিন বলেন বিএনপির অনেকের কারণে মুলাদীতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, মুলতঃ বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না থাকায় আ’লীগ অরাজকতা, ভোট ডাকাতি করতে সাহস পেয়েছে।