মাকে হত্যার বিচার চাইলো সাক্ষী
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী মো. মকবুল হোসেন (৬৪) জবানবন্দি পেশ করেছেন।
তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি আমার মাকে হত্যার বিটার চাই।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে সাক্ষী এ কথা বলেন। পরে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষ।
সাক্ষী বলেন, ৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাক বাহিনী ও এটিএম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে আমার মাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আরও বলেন, ওই সময় পাকবাহিনী ও আজহারুলের নেতৃত্বে লোকজনকে হত্যা এবং অগ্নি সংযোগ করে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ট্রেনে করে পাক বাহিনী ও এটিএম আজহারুল ইসলাম টেকশোর ৬নং রেল গোমটিতে আসে। তারা ট্রেন থেকে নেমে টেকশোর উত্তর দিকে যায়। ওই এলাকার বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে এবং গুলি করে।
তিনি বলেন, আজাহারুল আমাদের গ্রামের দিকে আসতে থাকলে আমার মাকে নিয়ে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ধাপপাড়ার দিকে দৌড়াতে থাকি। দৌড়াতে না পেরে মা এক পর্যায়ে বলেন, তুমি দৌড়ে পালাও আমি আস্তে-আস্তে যাব। আমি তখন ক্ষেতের আইল দিয়ে দৌড়াতে থাকি। কিছুদূর যাওয়ার পরে গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। তাকিয়ে দেখি দুজন পাকসেনা ও এটিএম আজহার মাকে গুলি করলে মা লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে মা মারা যায়।
তিনি বলেন, আমি ভয়ে ফলিমারী নদীর দিকে দৌড় দেই। মাঝ পথে দেখি এটিএম আজহার ও পাকসেনারা তমিজ নামে এক লোককে গুলি করে হত্যা করে। আমি নদীর পাশে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে তিন ঘণ্টা ছিলাম। তখন আমি গর্তে বসে মাথা উঁচু করে দেখি ধাপাপাড়া, মিদ্দাপাড়া, ঠনঠনপাড়া ও মোল্লাপাড়ায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় তারা লোকজনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে আজহারুল ও পাকসেনারা টেকশোর দিকে চলে যায়।
তিনি বলেন, তখন আমি গর্ত থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে মামার সঙ্গে দেখা হয়। মামাকে নিয়ে ধাপরা পাড়ায় আসি। সেখানে গিয়ে শুনি ৫-৬ জন ভরসা, বিষু, সুখিমাই. কালটি মাই চিনিমাইকে আজহার ও পাকসেনারা হত্যা করেছে।
সাক্ষী বলেন, আমি ও মামা মিলে মায়ের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি এবং দাফন করি।
তিনি বলেন, ৭১ সালের ১৭ এপ্রিল একটি ট্রেন রংপুর থেকে অপর একটি ট্রেন পার্বতীপুর থেকে আসলে এটিএম আজহারুল ও পাক বাহিনীসহ নেমে ঝাড়ূয়ার বিলের দিকে যায় এবং সেখানে প্রায় ১২শ লোককে হত্যা করে এবং কিছু লোককে ধরে নিয়ে যায় তা আমি লোক মুখে শুনেছি।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় থাকা এটিএম আজহারকে সনাক্ত করেন সাক্ষী।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহিন জেরা শুরু করেন। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (প্রসিকিউটর) একেএম সাইফুল ইসলাম, তাপস কান্তি বল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।