৭৩ উপজেলায় ভোট সোমবার, প্রস্তুত ইসি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সংঘর্ষের শঙ্কার মধ্যে পঞ্চম ধাপে ৭৩ উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
শনিবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে এ সব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ইসি। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব সরঞ্জামও পাঠিয়েছে ইসি।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩৬টি জেলার ৭৪টি উপজেলায় চলবে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৬৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান পদে ৩৬৪, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২০ এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭৯ জন প্রার্থী।
নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা টহল শুরু করেছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। এ ছাড়াও জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়ছেন। এ নির্বাচনকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ ইসিতে পাঠাচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা কমিশনের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছেন। এ অবস্থায় মাঠ প্রশাসনের ওপর নির্বাচনের সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে কমিশন।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস করল কি না, তা তারাই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে আমরা বলতে পারব না। আপনারা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে জেনে নিন তারা সন্ত্রাস করবে কি-না।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোয় নিরাপত্তারক্ষী বাড়াতে সব সিদ্ধান্ত নেবে স্থানীয় প্রশাসন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়াতে বা কমাতে পারবে তারা। এ বিষয়ে কমিশনের সম্মতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
৭৪টি উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার ৬৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৩৮০ জন ও নারী ভোটার ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৩ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৭০৩টি, ভোটকক্ষ ৩৫ হাজার ৯৪১টি।
নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৭০৩ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৩৫ হাজার ৯৪১ জন, পোলিং অফিসার ৭১ হাজার ৮৮২ জন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫২৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ৭৪টি উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ও পরে মোট ৫ দিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি উপজেলায় এক প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছে। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা বেশি হতে পারে। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি টহলে রয়েছে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। এ ছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্তসংখ্যক র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছেন।
এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (নারী-৪, পুরুষ-৬ জন), আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন।
ঝুঁকিপূর্ণ, পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধুমাত্র পুলিশের ক্ষেত্রে দুজন হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ২৯৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৭৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি ৭৪টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু টাঙ্গাইল-৮ আসনের নির্বাচনী এলাকায় বাসাইল উপজেলা যুক্ত থাকায় বাসাইল উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনও একই তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের ভোট, ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ভোট হয়, ১৫ মার্চ তৃতীয় ধাপের ভোট ও ২৫ মার্চ চতুর্থ ধাপের ভোট হয়। তিন ধাপেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বেশি উপজেলায় নির্বাচিত হন। কিন্তু চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বেশি উপজেলায় জয়ী হন।
এ ছাড়া ষষ্ঠ ধাপে আরও ২৮টি উপজেলার নির্বাচন মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হওয়ার কথা রয়েছে।