ইসির হিসাবে ১০৩ কোটি টাকার গরমিল
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩০ টাকার হিসেবে গরমিল!
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচনের কারণে বার বার খুচরা টাকা গুণতে হওয়ায মোট খরচের হিসাব নিয়ে খোদ ইসির হিসাবরক্ষণ শাখার কর্মকর্তারাই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন।
ইসির তথ্যমতে ৯৮৯ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ থেকে দশম জাতীয় নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা এবং উপজেলা নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু দশম নির্বাচনে ১৫৩ আসনে ভোট না হওয়ায় এখানে ৫০০ কোটি টাকার চেয়ে অনেক কম ব্যয় হয়েছিল।
জাতীয় নির্বাচনে পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলার পেছনে মোট ২৫৪ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছিল। অবশিষ্ট ২৪৬ কোটি টাকাসহ ইসির কাছে ৭৩৫ কোটি টাকা ছিল।
ইসি জানায়, উপজেলা নির্বাচনে মোট ব্যয় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ৯৭০ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
উপজেলা নির্বাচনে ১ম ধেকে ৪র্থ ধাপ পর্যন্ত শুধু পরিচালনা ব্যয় হয়েছে ১২২কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ৫৯০ টাকা। এর মধ্যে ১ম ধাপে ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫০ টাকা, ২য় ধাপে ব্যয় ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ ১৫ হাজার ৪১০ টাকা, ৩য় ধাপে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪১০ ও ৪র্থ ধাপে ২৭ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯২০ টাকা।
৫ম ধাপে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৭৩ লাখ৪৮ হাজার ৩৮০ টাকা।
অন্যদিকে ইউপি নির্বাচনে ব্যয় হয়েছে ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে খরচ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সব খরচ শেষে কমিশনের কাছে রিজার্ভ আছে ২৮৩ কোটি টাকার বেশি।
দশম নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনের জন্য জমা থাকা ৭৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৪৭ কোটি ৮৯ লখ ৯৭ হাজার ৬৭০ টাকা খরচ হলে এবং ইউপি নির্বাচনের ব্যয় ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা খরচসহ মোট ৩৪৮ কেটি ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭০ খরচ হওয়ায় কমিশনের কাছে থাকার কথা ৩৮৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩০ টাকা। কিন্তু কমিশন বলছে তাদের কাছে রিজার্ভ্ আছে ২৮৩ কোট টাকার বেশি। কমিশনের এ রিজার্ভ্ টাকা ধরে হিসেবে করলে ১০৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩০ টাকার প্রকাশ্য গরমিল দেখা যাচ্ছে!
এ ব্যাপারে ইসির একজন কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, এখানে খুচরা অনেক হিসাব আছে। যেটা মেলানো কষ্টকর। এ হিসাব মেলাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সরকার নির্বাচনের জন্য ৯৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল।
আরেক কর্মকর্তা বলেন- সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকের আইডি তৈরিতে, বিভিন্ন প্রচার প্রচারণায় অনেক খরচ গেছে। এসব খুচরা হিসাব মিলিয়ে লাভ নাই। আমরাই মিলাতে পারি না আপনারা কিভাবে মিলাবেন।
পঞ্চম ধাপে পরিচালনা ব্যয়: এদিকে পঞ্চম ধাপে ৭৪টি উপজেলার পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ টাকা। ৩৫ জন জেলা প্রশাসক ও আপিল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ৭৫ জন রিটার্নিং অফিসারের অনুকূলে ২৩ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৭৫ জন জেলা নির্বাচন অফিসারের অনুকূলে ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮০ টাকা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে এখনও কোনো চাহিদাপত্র আসেনি বলে ইসি সূত্র জানায়। তবে আগের নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় ধরা হয়েছে, পঞ্চম ধাপে এর কাছাকাছিই থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।
মূলত ব্যালট পেপার ছাপানো, কালি, সিল, ব্যালট বাক্স, ব্যাগ, মার্কিং পেন কেনা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তার ভাতা এবং মালামাল পরিবহনসহ ২৯টি খাত নির্বাচনে ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
ইউপি নির্বাচনে ব্যয়: এদিকে বরাদ্দ অর্থ থেকে ইউপি নির্বাচনে ব্যয় করা হয়েছে ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা। ৭৩ টি ইউনিয়নে ৩টি ধাপে এ টাকা দেয়া হযেছে বলে কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে ১৪টি জেলার ২৪টি ইউনিয়নে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ১১টি জেলার ১৬টি ইউনিয়নে ১৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং শেষ ধাপে ১৯টি জেলায় ২৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা দেয়া হযেছে।
৩১ মার্চ সোমবার পঞ্চম ধাপে দেশের ৭৩টি উপজেলায় নির্বাচন হবে।