১৩ দফা দাবি কোন ধর্মীয় দাবি নয়
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, রাসুল (সা:) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা ও কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার হেফাজতে ইসলামের দাবি মূলতঃ জামায়াতে ইসলামের নির্বাচনী ইশতেহার। হেফাজতের নতুন করে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মঙ্গলবার দলের পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ব্লাসফেমির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড – এ দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের সাথে জামায়াতে ইসলামের সম্পৃক্ততা আরো খোলাসা হয়ে গেছে।
পাকিস্তানি জেনারেল জিয়াউল হক ধর্মের অজুহাতে তার স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে মধ্যযুগের কালো আইনটিকে পাকিস্তানের দণ্ডবিধিতে সংযোজিত করেছিলেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ঠিক সেই আইনটিই জামায়াতে ইসলামের সংসদ সদস্য মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৯৫-খ ও ২৯৫-গ ধারা হিসেবে সংযুক্ত করার জন্য সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করেছিলেন। তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন থাকার পরও বিএনপি সে দাবি মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্যজোট শাসন আমলেও তাদের সে দাবি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বানচাল করার লক্ষ্যে শরীয়া আইনের নামে এ আইন প্রণয়নের দাবিকে জামায়াত সুকৌশলে হেফাজতের মাধ্যমে উত্থাপন করেছে।
ব্লাসফেমি আইন কেবল বাংলাদেশের সংবিধানের মূল আদর্শের পরিপন্থী নয়, মানবতা ও মুক্তচিন্তারও পরিপন্থী মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে যথাপোযুক্ত বিধান রয়েছে। সেই সত্যকে আড়াল করে বর্তমানে এই প্রশ্ন তোলার অর্থ হচ্ছে ধর্মকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়া।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানে এই আইনের বিষময় ফল আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এই আইনের ফলে পাকিস্তানে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেই, মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মতাবলম্বীদের মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে সেক্ষেত্রে এই আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি দৃঢ়ভাবে বলতে চায়, এই আইন প্রণয়নের কোন প্রয়োজন নাই। এই আইন প্রণয়নের দাবি তুলে হেফাজতী-জামায়াতীরা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি থেকে সরিয়ে পাকিস্তান বানাতে যে তৎপর চালাচ্ছে, জনগণ তাকে কখনই গ্রহণ করেনি এবং করবে না।
ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে বলা হয়, এসব কোন ধর্মীয় দাবি নয়। বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে উত্থাপিত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দাবি। বিশেষ করে এই দাবিতে নারীকে অবরুদ্ধ করার এবং নারী অধিকার প্রশ্নে অর্জনসমূহকে ধ্বংস করার জন্য যে কথা বলা হয়েছে তাতে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ক্ষুণ্নতো হবেই, নারী শিক্ষা, নারীর কর্ম জীবনকেও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।
১৩ দফায় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিও একই উদ্দেশ্যে প্রণীত বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিবেচনার কোন অবকাশ নেই। ওয়ার্কার্স পার্টি অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এই অপশক্তিসহ জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।