সাকিব এবার শাস্তির হুমকিতে

sakib al hasan সাকিব আল হাসানস্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ শ্রীলঙ্কা সিরিজে টিভি ক্যামেরায় অশালীন অঙ্গভঙ্গির জন্য তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। জরিমানা গুণতে হয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাথা গরম করেও। সেই রেশ কাটতে না কাটতে একটি জাতীয় দৈনিকে বিতর্কিত সাক্ষাৎকার দেওয়ায় আবারও শাস্তির হুমকিতে পড়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

টুর্নামেন্ট চলাকালে এমন উত্তেজনা ছড়ানোটা মোটেও ভালোভাবে নেয়নি বিসিবি। সংস্থার সভাপতি নাজমুল হাসান থেকে শুরু করে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সবাই এতে সাকিব আল হাসানের ওপর প্রচণ্ড নাখোশ। বোর্ড সভাপতি কার অনুমতি নিয়ে এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেটির খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে। নিজাম জানিয়েছেন, ‘সাকিবের সাক্ষাৎকারটি বোর্ডের নজরে এসেছে, আপাতত এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও ওয়াকিবহাল, ‘সাক্ষাৎকারে অনেকগুলো বিষয় আছে, যেসবের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের বক্তব্য জানা জরুরি।’ মিডিয়া বিভাগের প্রধান হওয়ায় তারও কৌতুহল, ‘সাক্ষাৎকারটি সাকিব অনুমতি নিয়ে দিয়েছেন কি না, সেটি জানা দরকার। আর অনুমতি পেলেও এ ধরনের মন্তব্য একজন ক্রিকেটার করতে পারে কি না, সেটিও বিবেচ্য। শাস্তির ব্যাপারটা মাথায় আছে আমাদের।’ চুক্তিবদ্ধ সব ক্রিকেটারের জন্যই আচরণবিধি আছে। প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আচরণবিধিতে পরিষ্কার করে বলা আছে বোর্ড ও ক্রিকেটের স্বার্থবিরোধী কোনো মন্তব্য করা যাবে না।’

সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছেন যে, ‘দেশে খেলা হলেই প্রত্যাশার চাপ বেশি থাকে। তাই দেশের বাইরে খেলা হলেই ভালো, অন্তত আগামী দুই বছর যেন তা-ই হয়। অথচ ক্রিকেটে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’টা চিরসত্য।’ এ মন্তব্য শুনে কলকাতা থেকে আগত এক সাংবাদিকের প্রতিক্রিয়া, ‘তাহলে কি নাইটদের (কলকাতা নাইট রাইডার্স) হোম ম্যাচও অন্য কোনো শহরে খেলার কথা বলবে সাকিব?’ ক্রিকইনফোর পাঠকরা সাকিবের এ মন্তব্যকে মনে করছেন ‘শিশুতোষ’।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বিশ্বকাপ ভরাডুবির পেছনে বোর্ড, সাংবাদিকদের লেখালেখি ও মানুষের প্রত্যাশাকে দায়ী করেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ‘তীর’টা গায়ে খেয়ে জখম বোর্ড। একাধিক বোর্ড পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সাক্ষাৎকারের আরো কিছু বিষয়েও ঘোর আপত্তি আছে তাদের। আপত্তিকর বিষয়গুলো হলো-

এক. এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ চ্যালেঞ্জ দেখলেই সটকে পড়ে।

দুই. ঘন ঘন পরিবর্তনের ধাক্কাই দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগেছেন ক্রিকেটাররা।

তিন. এ দেশের কিশোররা পাতলা খিচুড়ি আর সবজি খেয়ে বড় হয়। আর পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ক্রিকেটাররা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী।

সাকিব কী করে জানলেন যে, ১৬ কোটির দেশের ৯০ ভাগ মানুষ কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে এলেই পালিয়ে যান! তিনি কি জানেন যে, উপকূলের প্রতিটি মানুষ সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই জীবনযাপন করছেন? তিনি কি জানেন এ দেশের একজন পোশাককর্মী সামান্য ক’টা টাকার জন্য কী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন? তিনি কি জানেন ঢাকা শহরেই হাজারো শ্রমিক ভোর থেকে রাস্তায় বসে থাকেন দিনমজুরির অপেক্ষায়? এক বেলা কাজ না মিললে অনাহারে কাটাবে পুরো পরিবার। এ হতাশা নিয়েও প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এমন লক্ষকোটি মানুষ। সেই তারাও সাকিবের খেলা দেখতে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে উঁকি মারেন, প্রার্থনা করেন। বলতে বলতে গজরাচ্ছিলেন এক বোর্ড পরিচালক, ‘কী ভাবে সে নিজেকে!’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ