জাপা ক্রমেই ভেঙ্গে চলেছে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভাঙ্গা গড়ার খেলায় কেউ কেউ নিজেকে গড়তে পারলেও পারেনি এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। কোনোভা্বেই রোধ হচ্ছে না পার্টির ভাঙন। ক্রমেই ভাঙছে, ছোট হচ্ছে। ভাঙনই যেন তাদের নিয়তি।
সরকারে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। এখনও কেউ কেউ পার্টিতে ভাঙন সৃষ্টি করতে তৎপর রয়েছেন। আবার অনেকে দল ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে পদত্যাগের পথও খুঁজছেন।
১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে জাপা সরকারের স্পিকার শামছুল হুদা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. এম এ মতিনকে মহাসচিব করে জাতীয় পার্টি গঠিত হয়। জিনাত মোশারফের সঙ্গে প্রণয়ের অভিযোগে ১৯৯৫ সালে মিজান চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কাজী জাফর আহমেদ জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে (মি-জা-মো) নামে আলাদা প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন।
এর কিছুদিন পর এরশাদ মিজান চৌধুরীকে দলে ফিরিয়ে নেন। তখন কাজী জাফর আহমদকে চেয়ারম্যান ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে মহাসচিব করে জাতীয় পার্টি (জা-মো) গঠিত হয়। জাফর আহমদ আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে যান। ১৯৯৬ সালে এরশাদ জেলে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগকে নিঃশর্তভাবে সরকার গঠনে সমর্থন করে জাপা বিরোধী দলে যেতে চায়। কিন্তু এরশাদের অনুমতি ছাড়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। সরকারে অংশ নেওয়ায় জাপার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এরশাদ জেল থেকে মুক্ত হলে ১৯৯৮ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে সরকার থেকে পদত্যাগের চাপ দেন। তবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের প্রস্তাবে রাজী হননি। তিনি শরফুদ্দিন ঝন্টু, তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মোস্তাক আহমদসহ কয়েকজন এমপিকে নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং নিজেকে চেয়ারম্যান ও শেখ শহিদুল ইসলামকে মহাসচিব করে জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করেন।
২০০১ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি চার দলীয় জোট গঠন করে। কিন্তু এরশাদ এ জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে। বিএনপি জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করায় পার্টি মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে তার মতপার্থক্য দেখা দেয়। ওই সময় নাজিউর রহমান মঞ্জুকে চেয়ারম্যান ও শামীম আল মামুনকে মহাসচিব করে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) গঠিত হয়।
এরপর ১/১১ এর সময় রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ও এস এম এম আলমকে মহাসচিব করে গোলাম মসিহ ও মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে নতুন করে জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে তারা এরশাদের আহ্বানে আবার জাতীয় পার্টিতে একীভূত হন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের শেষের দিকে কাজী জাফরের নেতৃত্বে নতুন জাতীয় পার্টির আবির্ভাব ঘটে। এই ভাঙন ও পদত্যাগের ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টি থেকে সর্বশেষ পদত্যাগ করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক। বুধবার পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
অন্যদিকে, পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য ফকির আশরাফ ও গোলাম হাবিব দুলাল পদত্যাগের পথ খুঁজছেন বলে জানা গেছে।
পদত্যাগপত্রে জাপা চেয়ারম্যানের উদ্দেশে আতিক বলেন, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, জাতীয় পার্টির লাখ লাখ নেতাকর্মীদের ত্যাগ ও সম্মানের কথা না ভেবে এবং দলের একেক সময় একেক ধরনের কথা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে দলের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। তাই লাখ লাখ নেতাকর্মীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট ও হতাশায় ডুবিয়ে কষ্ট দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। সুতরাং বর্তমান এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও হবিগঞ্জ জেলা জাপার সভাপতির পদ থেকে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। আপনি আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে বাধিত হবো।
এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী জাফর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ ভালো নয়। এক ব্যাক্তির ইচ্ছায় দল চলতে পারে না। এরশাদ যতোদিন বেঁচে আছেন ততোদিন দল কোনো মতে টিকে থাকবে। তবে দেশ ও জাতির কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।’