রামপালে পাঁচ বছরের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সুন্দরবনের কাছে রামপালে বির্তকিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি সত্ত্বেও পাঁচ বছরের মধ্যেই এই কেন্দ্র উৎপাদনক্ষম হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের কর্মকর্তাদের এক বৈঠক থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুন্দরবনের কাছে বাংলাদেশ ভারত যৌথ অংশীদারিত্বে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা এবং স্থানীয়রা আন্দোলন করছে।
সুন্দরবনের অদূরে রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অংশিদারিত্বে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির ওই বৈঠকে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোয়ার ইসলাম এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের বিদ্যুৎ সচিব প্রদীপ কুমার সিনহা।
বৈঠকের পর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে।
ইসলাম বলেন, ২০১৮ সাল নাগাদ একটি ইউনিট অর্থাৎ ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।তিনি বলেন, এ ধরনের বড় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ১০-১২ বছর সময় লাগে।
তবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব জানিয়েছেন।
এই প্রকল্প থেকে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্য রেখে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।প্রতিটি কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৬৭০ মেগাওয়াট।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিদ্যুৎ সংস্থা এনটিপিসি এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি যৌথভাবে একটি কোম্পানিও গঠন করেছে।
বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি নামের এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামকে।
৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতাসীন হবার পর পাঁচটি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে বাগেরহাটে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্যতম।
কাজের অগ্রগতি দেখতে দুই দেশের বিদ্যুৎ সচিব রামপালে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছেন। কাজের অগ্রগতি দেখে তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জানালেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব।
সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীর ঘেঁষে এই প্রকল্পে এক হাজার ৮৩৪ একর জমির সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক
গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কিন্তু পরিবেশবাদীদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও রামপালেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়।
রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সেটির ক্ষতিকর প্রভাব সুন্দরবনের উপরে পড়বে বলে পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা রয়েছে।তারা বলছেন প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের কাছাকাছি হওয়ায় এই আশঙ্কা প্রবল।
কিন্তু সরকারের দিকে থেকে পরিবেশবাদীদের উদ্বেগকে বারবারই নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, “কেন এটা (রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ) বিতর্কিত হবে? আমি এটার কোনো যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছি না।”
ইসলাম বলেন, সরকার অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় এই প্রকল্পের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছে।
প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় দেখতে গত বছর গিয়েছিলাম বাগেরহাটের রামপালে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে।
কিন্তু বিদ্যুৎ সচিব দাবি করছেন এই প্রকল্প নিয়ে রামপালের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কোনো আপত্তি নেই ।
কিন্তু স্থানীয়রা এই প্রকল্পের বিরোধীতা করে একটি সাংগঠনও তৈরি করেছেন। যার নাম কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি। এই কমিটির সভাপতি সুশান্ত কুমার দাশ সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ।
দাশ বলেন, “আমাদের দাবি উপেক্ষা করে সরকার গায়ের জোরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।”
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ এর চাহিদা মেটাতে হলে বড় আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনায় ভারতের যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতা থাকায় বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে যৌথ অংশিদারিত্বে গেছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।