বাকৃবি এলাকা ছাত্রলীগের তৈরি নরক
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ময়মনসিংহঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্রদের ৯টি আবাসিক হলের অতিথি কক্ষ যেন ছাত্রলীগের একেকটি টর্চার সেল। প্রতিদিন রাত ১০টার পর হলের অতিথি কক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের সামনে প্রথম বর্ষের শির্ক্ষার্থীদের হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এটাই ছাত্রলীগ নেতাদের অঘোষিত নিয়ম। পান থেকে চুন খসলেই চলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের নাম মুখে আনা বারণ! এদিক-ওদিক হলেই নানা হুমকি। সেই সঙ্গে আছে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতার পিছু পিছু হাঁটার মহড়া।
ছাত্রী হলের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা ও ছাত্রীদের ইভটিজিং করা ছাত্রলীগকর্মীদের নিত্যদিনের কাজ। ক্যাম্পাসের কামাল-রণজিৎ মার্কেটে গিয়ে শীর্ষ নেতাদের ঘিরে গোল হয়ে শুনতে হয় তাদের দীক্ষা।
এছাড়াও বাইরের মেয়েরাও এদের হাত থেকে রেহাই পায় না। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যেন নরকে পরিনত হয়েছে ছাত্রলীগের কারনে।
অন্যদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থী বা নিজেদের মধ্যে কোনো রূপ মনোমালিন্য বা কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটলেই শিবিরের ধুয়া তুলে অতিথি কক্ষে ধরে এনে চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন।
এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের কোনো নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ছাত্রলীগ জানতে পারলে লাঠিসোঁটা, রড, ছুরি, হকিস্টিক নিয়ে চালানো হয় অতর্কিত হামলা। বেধড়ক পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় হাত-পা। কখনো ধরে এনে বন্দি করে রাখা হয় হলের অতিথি কক্ষে। রাতভর চালানো হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। কয়েক মাস ধরে ক্যাম্পাসে শিবির বা ছাত্রদলের ধুয়া তুলে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মী।
সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে আসা ছেড়েই দিয়েছে শিবির ও ছাত্রদলের অনেক সমর্থক। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির বানিয়ে ছাত্রলীগের ওই শারীরিক অত্যাচার প্রতিহত করতে কোনো রকম ব্যবস্থাই নেয়নি প্রশাসন। হলের অতিথি কক্ষে প্রতিদিনের ওই সব ঘটনার কোনো প্রতিবাদও করেনি হল প্রশাসন। ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। সাদ হত্যা এরই জ্বলন্ত উদাহরণ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপের মধ্যে সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবু সমর্থিত ছয়টি হলে এ সব ঘটনা বেশি ঘটে। ক্যাম্পাসের আশরাফুল হক হলের সাজিদুর রহমান স্বপন, রেজাউল করিম রেজা, রোকনুজ্জামান রোকন, শহীদ শামসুল হক হলের রিন্টু, লিমন, অপু, সজীব, জনি, আতিক, শহীদ নাজমুল আহসান হলের শাহীন, নাজমুল, নাঈম, লিমন এসব কর্মকান্ডের মূল হোতা। ওই সব হলে চলে তাদের রাজত্ব। এ ছাড়া হলের কে কোন সিটে উঠবে, কে হল ডাইনিং চালাবে- এসবও ঠিক করে হলের এসব নেতা-কর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হলের পরিবেশ নষ্ট করছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই। হলের ছোট ভাইদের ‘বেয়াদব’ বানাচ্ছে তারাই। ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে শিবিরের ধুয়া তুলে চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। হলে ছাত্রলীগের দাপটে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। প্রশাসনও নেয় না কোনো পদক্ষেপ। অন্যদিকে প্রভোস্ট এ সব নেতা-কর্মীর কথামতো চলেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবু বলেন, ‘বর্তমান ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো রকম খারাপ আচরণ পর্যন্ত করে না, শারীরিক নির্যাতন তো দূরের কথা। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল-শিবির সবাই লেখাপড়া করার সমান সুযোগ পায়। এ অভিযোগ ছাত্রলীগের সম্মানহানী করার জন্য।