আ’লীগের সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন আবার বিরোধীতা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা বললেও ক্ষমতা দখল ও রক্ষায় তারা কখনও সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকতা করে কখনও বিরোধীতা করে। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে সঠিক নীতি গ্রহণ না করে স্ববিরোধী নীতির চর্চা করছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদদলিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতার জন্য মৌলবাদীদের সঙ্গে তাদের ঐক্য এবং বিরোধীতা কখনও প্রকাশ্য কখনও কৌশলগত। যারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জন্য হুমকি তাদের যুদ্ধাপরাধ ও সন্ত্রাসের অভিযোগে নিষিদ্ধ করে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় দলটি। আর যেসব মৌলবাদী দল আওয়ামী লীগের জন্য নিরাপদ ও তাদের ক্ষমতার জন্য সহায়ক সেসব সংগঠন সরকারের কাছ থেকে পায় আর্থিক সুবিধা ও রাজনৈতিক আনুকূল্য। আওয়ামী লীগের সংস্পর্শে আসলে যুদ্ধাপরাধী হয় মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিক্রিয়াশীল হয় প্রগতিশীল, স্বৈরাচারী হয় গণতন্ত্রী, দেশদ্রোহী হয় দেশপ্রেমিক, লুটেরা হয় সাদা মনের মানুষ।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত দেশব্যাপী মুসলামানদের মধ্যে নানারকম বিভ্রান্তি ছড়াতে মরিয়া। বিএনপি জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ড রুখতে ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির সঙ্গে আছে সরকার। দেশবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড রুখতে সরকার সবসময় ইসলামি এ পার্টিকে সহযোগিতা করবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, মৌলবাদ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের স্ববিরোধী বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড সবসময় লক্ষ্যনীয়। তারা পক্ষে বিপক্ষে অতিশয়োক্তি করছে। তারা একদিকে মৌলবাদের বিরোধীতা করছে অন্যদিকে লালন করছে। এই পরস্পরবিরোধী নীতি তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়।
নেতারা বলেন, ১৯৯৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামায়াত নেতা গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিল ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হয়। বিচারের দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনে তৎকালীন বিএনপি সরকার চরম বেকায়দায় পড়ে। সরকার গোলাম আজমকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে সরে আসে। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিএনপির বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। ওই সময় বিএনপিকে হটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও তারা যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াতের বিচার করেনি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বর্তমানে জামায়াত নিষিদ্ধে তৎপরতা দেখা গেলেও একই অভিযোগে মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম পার্টির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বর্তমান সরকার। আবার জেএমবি, হিযবুত তাহরির ও হরকাতুল নিষিদ্ধ হলেও এখনও অনেক মৌলবাদী সংগঠন সরকারের আশীর্বাদে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এসব সংগঠন যদি সরকার পতনে ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে তাহলে সন্ত্রাসের অভিযোগে তাদেরও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নেতারা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী ফ্রন্টকে জোটভুক্ত করে। জাকের পার্টির সঙ্গে ছিল অনানুষ্ঠনিক ঐক্য। এবারও আওয়ামী লীগ নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়েছে। শেষমেষ দশম সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ অন্যান্য সংসদীয় দলসহ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে জোট বেধেছে। স্বার্থের জন্য তারা মৌলবাদকে আলিঙ্গন করে, স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এ কারণে মনে হয় পানির যেমন রং নেই আওয়ামী লীগের তেমনি চরিত্র নেই।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশারেফা মিশু। তিনি বলেন, মৌলবাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নতুন নয়। তারা সব সময় সাম্প্রদায়িক। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তাদের মৌলবাদের পক্ষাচারণ ও বিরুদ্ধাচারণ আবর্তিত হয়।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী যদি বিএনপির সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটে না থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকতো তাহলে অধ্যাপক গোলাম আযমসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে আজ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো না। ফাঁসি হতো না কাদের মোল্লার। কারাবরণ করতে গিয়ে মরতে হতো না মাওলানা ইউসুফকে। জামায়াত হতো আজকের ঐকমত্যের সরকারের বড় অংশীদার। জামায়াত পেতো মন্ত্রীত্ব, থাকতো নেতাদের বাড়ি-গাড়িতে পতাকা।