দুই নেত্রীর বরাবর এরশাদের চিঠি

1365605489netaaa

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের চলমান সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছেন। বুধবার জাতীয় পার্টির মিডিয়া বিভাগের সদস্য এম এ রহিম এক ই-মেইল বার্তায় এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এম এ রহিম পরিবর্তন ডটকমকে জানান, গত ৭ এপ্রিল এই চিঠি দুই নেত্রীর বরাবরে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে চিঠি। দুটি চিঠিরই শেষে এরশাদ লিখেছেন, ধন্যবাদান্তে, আপনার গুনমুগ্ধ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে এরশাদ লেখেন,

“আসসালামু আলাইকুম। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আপনার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন। আপনি শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন- আমার কাছে আপনার তার চেয়েও বড় পরিচয় আপনি এদেশের জাতির জনকের কন্যা এবং অতিব ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী। দলীয় এবং রাষ্ট্রীয় পদ পরিচয় এক সময় সাবেক হয়ে যায় কিন্তু জাতির জনকের কন্যা এই পরিচয় আপনার চিরদিনের। তেমন এক নেত্রী হিসেবে এই দেশ ও জাতির জন্য আপনার মমত্ববোধ আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। দেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে এবং জাতির সামনে যে দুর্যোগ বিরাজ করছে তা নিয়ে আপনি কতটা বিচলিত হতে পারেন আমি তাও অনুভব করি। আমি একান্তভাবে বিবেকের তাড়নায় দেশের এই ভয়াবহ ক্রান্তিলগ্নে আপনার প্রতি সবিনয় অনুরোধপূর্বক কিছু বক্তব্য পেশ করতে চাচ্ছি।

আপনার দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ভালোবাসা আমার কাছে প্রশ্নাতীত। সেই বিশ্বাস এবং আস্থা রেখেই দলীয় গণ্ডি পেরিয়ে আপনাকে এই নিবেদন করছি যে, আসুন এবার বিগত দিনের সকল তিক্ততা মুছে দিয়ে এবং ভুলে গিয়ে দেশে বিরাজমান সংকট উত্তোরণের উপায় খুঁজে বের করি। আমি বিশ্বাস করি, সঙ্কট যত তীব্র হয়, সমাধানের তাগিদ তত প্রবল হয়। আজকের প্রেক্ষাপটে এটা সর্বজনবিদিত যে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এতোবড় রাজনৈতিক সঙ্কট ইতিপূর্বে আর কখনও ঘটেনি।

মাননীয় নেত্রী, আপনি দেশ পরিচালনা করছেন এবং আল্লাহ পাক চাইলে আগামীতেও দেশ পরিচালনা করবেন কিন্তু দেশ যদি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় তাহলে, সেখানে আমাদের রাজনীতির কী অর্থ থাকতে পারে! দেশের বর্ণনাতীত ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনীতি পর্যুদস্ত হচ্ছে, অর্থনৈতিক নির্ভরতার গার্মেন্টস শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জনগণের কোন নিরাপত্তা নাই। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা চলছে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে। গোটা জাতির জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা, নৈরাজ্য এবং গণতন্ত্র বিকাশের কথা এখন স্বপ্ন বিলাসে পরিণত হয়েছে। হিংসার রাজনীতির কারণে মানুষের মানবিকতাবোধ লোভ পাচ্ছে। যেভাবে মানুষ মরছে এবং মারছে সে দৃশ্য আমাদের সভ্যতার মুখে কালি লেপে দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা মিডিয়ার আধিপত্যের এই যুগে আমাদের রাজনীতির ভয়ঙ্কর ও বর্বর চিত্র বিশ্ববাসী অবলোকন করছে। দুনিয়ার কাছে আমরা ঘৃণা আর ছিঃছিঃ কুঁড়াচ্ছি।

মাননীয় নেত্রী, একবার ভাবুন, ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়াই কি বড় কথা? দেশ এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য কি আমাদের কাছে বড় নয়?

আমি আজ বয়সের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি। এই দিগন্তে দাঁড়িয়ে ভারাক্রান্ত মনে আপনাদের কাছে একান্ত প্রার্থণা জানাই, এই মুহূর্তে কোনো হিংসা বা জেদ নয়। ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে এগিয়ে আসুন সঙ্কট মোচনের আলোচনায়। শান্তির পথে উদ্যোগ নিয়ে ইতিহাসে সমৃদ্ধ হয়ে থাকুন। দিশেহারা জাতি একান্তভাবে কামনা করছে, আপনারা প্রধান দুটি দলের দুই সম্মানিত নেত্রী একত্রে বসুন। আমিও আপনাদের পাশে থাকবো। জাতি হিসাবে আমরা অসীম ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। কত ত্যাগ কত বলিদান আর কত বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা যে অর্জন করেছি সেই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস শুধু হিংসার রাজনীতির কালিমা দিয়ে ঢেকে দিতে পারি না।

প্রকৃতিতে যখন মহা বিপর্যয় নেমে আসে তখন শত্রু-মিত্র একসাথে শুধুমাত্র বাঁচার প্রার্থণায় একাকার হয়ে যায়। যে কারণেই হোক না কেন দেশে এখন বিপর্যয় নেমে এসেছে। তার ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা না হয় এই মুহুর্তের জন্য ভূলে গেলাম। সবার আগে জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা, দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসুন আমরা সবাই একসাথে বসে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করি।

মাননীয় নেত্রী, আল্লাহর অসীম রহমতে আজ আপনি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী। এখন আপনার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। আপনার অবস্থান থেকে এই মুহুর্তে আপনি শান্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। আপনি বিরোধী নেতাকে ডাকুন, আমাকে ডাকুন- সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের নেতাদের ডাকুন এবং দেশের বরেণ্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গকেও ডাকুন। আলোচনায় বসুন। আমার বিশ্বাস আপনার আহ্বানে সবাই সাড়া দেবেন। যদি কেউ না আসেন তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন। এই মুহুর্তে অন্ততঃ আপনার অবস্থান থেকে এই উদ্যোগ জরুরী। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই আপনাকে এই অনুরোধ জানাচ্ছি না- আমি জাতির জনকের কন্যার কাছেও এই নিবেদন জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আপনি আমার অনুরোধ বিবেচনা করবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।”

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিঠিতে এরশাদ লেখেন,

“আসসালামু আলাইকুম। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আমি একান্তভাবে বিবেকের তাড়নায় দেশের এই ভয়াবহ ক্রান্তিলগ্নে আপনার প্রতি সবিনয় অনুরোধপূর্বক কিছু বক্তব্য পেশ করতে চাচ্ছি।

আপনার দেশপ্রেম আমার কাছে প্রশ্নাতিত। সেই বিশ্বাস এবং আস্থা রেখেই দলীয় গণ্ডি পেরিয়ে আপনাকে এই নিবেদন করছি যে, আসুন এবার বিগত দিনের সকল তিক্ততা মুছে দিয়ে এবং ভুলে গিয়ে দেশে বিরাজমান সঙ্কট উত্তোরণের উপায় খুঁজে বের করি। আমি বিশ্বাস করি, সঙ্কট যত তীব্র হয়, সমাধানের তাগিদ তত প্রবল হয়। আজকের প্রেক্ষাপটে এটা সর্বজনবিদিত যে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এতোবড় রাজনৈতিক সঙ্কট ইতিপূর্বে আর কখনও ঘটেনি।

মাননীয় নেত্রী, আপনিও দেশ পরিচালনা করেছেন। আল্লাহপাক চাইলে আবারও দেশ পরিচালনা করবেন কিন্তু দেশ যদি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় তাহলে সেখানে আমাদের রাজনীতির কী অর্থ থাকতে পারে! দেশের বর্ণনাতীত ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনীতি পর্যুদস্ত হচ্ছে, অর্থনৈতিক নির্ভরতার প্রতীক গার্মেন্টস শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জনগণের কোন নিরাপত্তা নাই। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা চলছে না। গোটা জাতির জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা, নৈরাজ্য এবং গণতন্ত্র বিকাশের কথা এখন স্বপ্ন বিলাসে পরিণত হয়েছে। হিংসার রাজনীতির কারণে, মানুষের মানবিকতাবোধ লোভ পাচ্ছে। যেভাবে মানুষ মরছে এবং মারছে সে দৃশ্য আমাদের সভ্যতার মুখে কালি লেপে দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা মিডিয়ার আধিপত্যের এই যুগে আমাদের রাজনীতির ভয়ঙ্কর ও বর্বর চিত্র বিশ্ববাসী অবলোকন করছে। দুনিয়ার কাছে আমরা ঘৃণা আর ছিঃছিঃ কুঁড়াচ্ছি।

মাননীয় নেত্রী, একবার ভাবুন, ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকাই কি বড় কথা? দেশ এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য কি আমাদের কাছে বড় নয়?

আমি আজ বয়সের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি। এই দিগন্তে দাঁড়িয়ে ভারাক্রান্ত মনে আপনাদের কাছে একান্ত প্রার্থণা জানাই। এই মুহূর্তে কোনো হিংসা বা জেদ নয়। ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে এগিয়ে আসুন সঙ্কট মোচনের আলোচনায়। শান্তির পথে উদ্যোগ নিয়ে ইতিহাসে সমৃদ্ধ হয়ে থাকুন। দিশেহারা জাতি একান্তভাবে কামনা করছে, আপনারা প্রধান দুটি দলের দুই সম্মানিত নেত্রী একত্রে বসুন। আমিও আপনাদের পাশে থাকবো। জাতি হিসাবে আমরা অসীম ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। কত ত্যাগ, কত বলিদান আর কত বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস শুধু হিংসার রাজনীতির কালিমা দিয়ে ঢেকে দিতে পারি না।

প্রকৃতিতে যখন মহাবিপর্যয় নেমে আসে তখন শত্রু-মিত্র একসাথে শুধু বাঁচার প্রার্থণায় একাকার হয়ে যায়। যে কারণেই হোক না কেন দেশে এখন বিপর্যয় নেমে এসেছে। তার ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা না হয় এই মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলাম। সবার আগে জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা, দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসুন আমরা সবাই একসাথে বসে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করি। আর সেই উদ্যোগটা আসুক সবার আগে আপনারই পক্ষ থেকে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।”

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ