মুঘল শাসকদের সমাধির সন্ধান কালিয়াকৈরে
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, গাজীপুরঃ প্রাচীন ঐতিহ্যের সন্ধানে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ঢোলসমুদ্র (মুটেরচালা) এলাকায় রাজবাড়ী খননের কাজ এগিয়ে চলছে।
এবার মধ্যযুগের মোগল প্রশাসকদের সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন মসজিদের পর সমাধি সৌধটিও ত্রয়োদশ বা চতুর্থদশ শতাব্দিতে তৈরি করা হয়েছিল।
এর আগে এখানে ত্রয়োদশ বা চতুর্থদশ শতাব্দিতে তৈরি করা মসজিদের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ফুল, ফলের নকশা ছিল। যে গুলো স্বভাবতই পুরাতন মসজিদ গুলোতে ব্যবহার করা হয়েছিল।
এই এলাকার আধা কিলোমিটার জুড়ে ১২শ সাল থেকে ১৮শ সালের মধ্যে মধ্যযুগের মোগল মুসলিম প্রশাসকরা বড় ধরনের প্রশাসনিক কার্যালয় স্থাপন করেন। গত তিন মাস ধরে এ রাজবাড়ী খননকালে স্থাপত্য, সমাধি, মসজিদের নিদর্শন বেরিয়ে আসছে। কয়েক স্পটে খনন করার পর মসজিদ, অফিস, মোগল আমলের সমাধিসহ নানা স্থাপত্যের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাচীন ঐতিহ্যের সন্ধানে রাজবাড়ী খননের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। উন্মেচিত হয়েছে মধ্য যুগের মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন। পাওয়া গেছে মোগল আমলের প্রভাবশালী মুসলিম শাসকদের সমাধি সৌধ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা খনন কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার সফিপুর বাজার থেকে উত্তরে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরের ঢোলসমুদ্র গ্রামটি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক বিভাগের উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় ২৫ জন শ্রমিক নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণার কাজ শুরু করা হয় তিন মাস আগে।
খননে মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক ইটের তৈরি নকশায় অংলকিত নিদর্শন, দেয়ালের বাইরে হাতে কাটা ইটের জালি নকশা ও বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া প্রায় দেড় মাস পর এবার সন্ধান মিলল বিভিন্ন কারু কাজ দিয়ে তৈরি একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। আর মাটির নীচ থেকে বেড়িয়ে আসে পুরনো বিভিন্ন নিদর্শন। মোগল আমলের স্থাপত্য প্রভাবশালী মুসলিম শাসকদের সমাধি সৌধ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক খনন দলের দলনেতা নাহিদ সুলতানা জানান, ওই গ্রামের একটি সুউচ্চ ঢিবির চারটি জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালানো হলে সেখানে খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ শতাব্দিতে নির্মিত এই মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উম্মেচিত হয়েছে। তা ছাড়া মধ্য যুগের মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন (১২০০ সাল থেকে ১৮০০সাল পর্যন্ত) ১টি গম্বুজ ও সমাধি সৌধ পাওয়া গেছে। আশেপাশের স্থাপনা দেখে মনে হচ্ছে মুসলিম স্থাপত্য কাঠামো, সামন্ত রাজা, কররানী, গাজী ও সুফি সাধকরা এ দেশে শাসন করেছেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়ের অধীনে তিন মাস খনন কাজ হয়েছে। বর্তমানে বাজেট না থাকায় কাজ অপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে এ এলাকায় মাঠ, পুকুর,দিঘিসহ বিভিন্ন স্থানে খনন কাজ করা হবে। এখানে আরও বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন দলনেতা নাহিদ সুলতানা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান জানান, মধ্য যুগের মুগল আমলের স্থাপত্য নিদর্শন ও সমাধি সৌধের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রায় দেড়-দুই বছর আগে ঢোল সমূদ্র গ্রামের উঁচু ঢিবির এই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়। অবশ্য স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় এই উঁচু ঢিবিতে প্রথম খনন কাজ শুরু করি। জাতীয় ইতিহাস বইগুলোতে এ রাজবাড়ীর বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এটা আমাদের একটি কঠিন ব্যাপার ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে গাজীপুরের কোন ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে নেই। এবার এ সকল কাহিনী পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত করা যাবে। সরকারিভাবে এগুলো সংরক্ষণ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি মাটির তৈরী প্রাচীন অট্টালিকার সন্ধানে ঢোল সমূদ্র গ্রামের মাটি খনন কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।