টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুললো শ্রীলংকা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ গত আসরে কলম্বোর ফাইনালে হতাশায় পুড়েছে শ্রীলঙ্কা। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের ওয়াংখেড়ে,২০০৯ বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ফাইনালের লর্ডস অথবা ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের ব্রিজটাউন-হতাশা সবখানেই। আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের সাত বছরে পঞ্চম ফাইনালে ভাগ্যটা বদলাল শ্রীলংকার। ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শিরোপা জিতল তারা। ভারতের ১৩০ রানের চ্যালেঞ্জ ১৩ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় তারা। আগেই টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দেয়ায় এটাই সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের সেরা বিদায়ী উপহার হয়ে থাকল। পুরো টুর্নামেন্টে নিস্প্রভ থাকা সাঙ্গাকারা ৩৫ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থেকে রাঙ্গিয়ে গেলেন বিদায়টা। এছাড়া ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন পেরেরা।
সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের বিদায়টা স্মরনীয় করার মিশনে শুরুতেই কুশল পেরেরাকে হারায় লঙ্কানরা। মোহিত শর্মার বলে ৫ রান করে জাদেজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন কুশল। দিলশান ১৬ বলে ১৮ করে অশ্বীনের বলে ক্যাচ তুলে দেন কোহলিকে। বিদায়ী টি-টোয়েন্টি খেলা মাহেলা জয়াবর্ধনে ২৪ বলে ২৪ করে রায়নার বলে ক্যাচ দেন অশ্বীনকে। জয়ের জন্য শেষ ৩৬ বলে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৪৬ রানে,হাতে ৬ উইকেট। অমিত মিশ্রর করা ১৫তম ওভারে ১৪ রান নিয়ে সাঙ্গাকারা ও থিসারা পেরেরা লক্ষ্যটা ৩০ বলে কমিয়ে আনেন ৩৩ রানে। সেই মিশ্রর করা ১৭তম ওভারে নেয়া ১৫ রানে ম্যাচটা হাতের মুঠোয় চলে আসে শ্রীলঙ্কার। শেষ ১৮ বলে দরকার তখন মাত্র ১২ রান।
নেতৃত্ব নেয়ার পর ভারতকে ২০০৭ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টি শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ধোনি। এরপর জিতেছেন ২০১১ বিশ্বকাপ আর ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এবার জিতলে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে মর্যাদার চারটি শিরোপা জেতা প্রথম অধিনায়ক হতেন ধোনি। ভারতীয় মিডিয়াকে যেটিকে বলছে ‘গ্র্যান্ড স্লাম’।
এই টুর্নামেন্টে তিনটি ফিফটি পেয়েছিলেন বিরাট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে পেলেন ক্যারিয়ারের ৮ম টি-টোয়েন্টি ফিফটি। তাতে ম্যান অব দ্য সিরিজের দাবিদারও হয়ে উঠলেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত ৫৮ বলে ৫ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ৭৭ করে রান আউট হন কোহলি। ৬ ম্যাচে কোহলির ৩১৯ রানই সর্বোচ্চ এই আসরের।
পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে ঝড় তুলতে না পেরে ভারত করেছিল ৩১ রান। তবে বিরাট কোহলি যে রয়েছেন স্বপ্নের ফর্মে। তার এবারের টুর্নামেন্টে চতুর্থ ফিফটিতে চ্যালেঞ্জিং স্কোরের ভিত পায় ভারত। যুবরাজ সিং অস্বাভাবিক রকম ধীরে না খেললে স্কোরটা বেশি হতে পারত আরও। ২১ বলে মাত্র ১১ রান করেছিলেন যুবরাজ। শেষ পর্যন্ত কুলাসেকারার বলে পেরেরাকে ক্যাচ দিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের স্বস্তি এনে দেন যুবরাজ!
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেন আজিঙ্কা রাহানে। ম্যাথুজের বলে ৩ রান করে বোল্ড হয়ে গেছেন তিনি। এরপর দেখে শুনে খেলা বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা এগিয়ে নিতে থাকেন ইনিংসটা। ১০ ওভারে এই দুজন স্কোরটা নিয়ে যান ৬৪-তে। ৬০ রানের জুটিটা ভাঙ্গেন রঙ্গনা হেরাথ। ১১তম ওভারে ২৬ বলে ২৯ করে সেনানায়েকে’কে ক্যাচ দেন রোহিত শর্মা। এরপর কোহলির ফিফটিতে ১৫ ওভার শেষে ২ উইকেটে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৯৫। কুলাসেকারার ১৬তম ওভারে আসে ১৬ রান। এর ১৫রানই নেন কোহলি। তবে এরপর আর সেভাবে তান্ডব চালাতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। তাই থামতে হয় ১৩০ রানে। কোহলি করেন ৭৭। হেরাথের করা সপ্তম ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কোহলি। সেটি লুফে নিতে পারেননি লঙ্কান অধিনায়ক। শেষমেশ ওই কোহলির ব্যাটে এল আরেকটি ফিফটি। এই বিশ্বকাপে গত পাঁচ ম্যাচে তাঁর চতুর্থ ফিফটি! ১টি করে উইকেট পেয়েছেন ম্যাথুজ,কুলাসেকারা ও হেরাথ।
আজকের ম্যাচের আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে সর্বোচ্চ রান উঠেছে ১৫৭। ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়ান্ডার্সে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ভারতই তুলেছিল এই রান। এবং সে ম্যাচ জিতেছিল ৫ রানে। গতবার যেমন ১৩৭ রান করেও জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। ভারতের এই পুঁজি টি-টোয়েন্টি হিসেবে যত্সামান্যই।
বৃষ্টিস্নাত কন্ডিশনে মিরপুরের স্লো উইকেট রুপান্তরিত লর্ডস,বার্মিংহাম কিংবা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে! এখানে স্পিনারদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন সুইং বোলাররা। স্যাঁতস্যাঁতে কন্ডিশনে গুরুত্বপূর্ণ টসটা জিতে বোলিং নিতে ভুল করেননি লঙ্কান অধিনায়ক মালিঙ্গা।
পেস শক্তি বাড়াতে সেগুকে প্রসন্নর জায়গায় থিসারা পেরেরাকে ফিরিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে ভারত খেলছে সেমিফাইনালের একাদশ নিয়ে। এমন সুইংগিং কন্ডিশনে মোহাম্মদ সামির মত সুইং বোলারের বেঞ্চে বসে থাকাটা বিস্ময়ের।
বৃষ্টিতে ৪০ মিনিট পিছিয়ে গেছে ফাইনাল। ম্যাচ মাঠে গড়াবে ৭টা ৪০ মিনিটে। তবে খেলা হবে পুরো ২০ ওভার। এমনিতে টি-টোয়েন্টিতে দুই ইনিংসে ৫ ওভার করে খেলা হলেও ম্যাচ পরিত্যাক্ত হয় না। তা ছাড়া আগামীকাল রিজার্ভ ডেও রাখা হয়েছে ম্যাচটির। তবে সব শংকা উড়িয়ে নির্বিঘ্নেই হয়েছে ম্যাচ।
এই ম্যাচে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন কুমার সাঙ্গাকারা এবং ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হন বিরাট কোহলি।