সাগর-রুনি হত্যার ১৪ মাস: তদন্তে চরম স্থবিরতা
ঢাকা: দীর্ঘ ১৪ মাসেও গনমাধ্যমের জনপ্রিয় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার কিনারা হয়নি। গ্রেফতার হয়নি প্রকৃত একজন আসামিও। আর দু’দফা হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া র্যাবের কার্যক্রমে নেমে এসছে চরম স্থবিরতা। নিহতের পরিবার ও গনমাধ্যম কর্মীদের এমন সব অভিযোগের জবাব দিতেও ব্যর্থ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যার ১৪ মাস াতিবাহিত হয়েছে গতকাল (বৃহস্পতিবার)।
দীর্ঘ ১৪ মাসেও এই সাংবাদিক দম্পতির প্রকৃত খুনিরা গ্রেফতার হয়নি। উদঘাটিত হয়নি মামলার রহস্য। ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের হাত ঘুরে ডিবিতে এবং প্রায় ৮ মাস আগে র্যাবের হাতে এই মামলার তদন্তভার ন্যাস্ত হওয়ার পরও কোন অগ্রগতি হয়নি এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যার প্রকৃত আসামী গ্রেফতারের নামে পুলিশ, সিআইড, ডিবি ও র্যাব পুরো ৪২৫ দিন জুড়ে কিছু নাটক উপস্থাপন করেছে। দীর্ঘ দিনে এই নির্মম হত্যাকান্ডের কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তাদের পরিবার। সাগর-রুনি গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তাদের রাজা বাজারের ভাড়ার বাসায় নির্মমভাবে খুন হন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব এই পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। যার মধ্যে নিহতদের রাজা বাজারের ভাড়া বাড়ির দারোয়ান এনামূলও রয়েছে । গেফতার হওয়া অন্য সাতজন হলেন- তানভীর রহমান, বাড়ির অপর এক দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল, সন্দেহভাজন ডাকাত রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ।
এই গ্রেফতারকে অগ্রগতি হিসেবে দেখছে না নিহত সাগর-রুনির পরিবার। মামলার বাদি রুনির ভাই নওশের রোমানের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পজেটিভলি দেখার কোনো কারণ নেই। এগুলো ‘অ্যাচিভমেন্ট’ নয়। এই গ্রেফতার লোক দেখানো।’
নওশের রোমান বলেন, ‘সাগর-রুনির মত জনপ্রিয় দুই সাংবাদিক তাদের বাসায় খুন হওয়ার পর ইতিমধ্যে ১৪ মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ এই মামলার প্রকৃত একজন আসামিও ডিটেক্টই হয়নি। এটা নিহতের পরিবারের জন্য ভীষন কষ্টের।’ নওশের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘র্যাব এই মামলার তদন্তভার পেয়ে কিছুদিন পর পর একটা নতুন নাটক করছেন। আর আমরা সবাই দর্শক হয়ে তা দেখছি। শুধুমাত্র কালক্ষেপন করার লক্ষ নিয়ে সাগর-রুনির ডিএনএ পরীক্ষা করতে আমেরিকাতে পাঠানো হয়েছে।’
বহিস্কৃত ৮ সাংবাদিক এখনো অবাঞ্চিত
সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত গনমাধ্যম কর্মীদের মানববন্ধন ও সমাবেশে হামলা ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননা ও সম্পূর্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে এটিএন বাংলার জ ই মামুন, ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী, মাহমুদুর রহমান, এসএম বাবু, কেরামত উল্ল¬াহ বিপ্ল¬¬ব, শওকত মিল্টন, মানস ঘোষ, নাদিরা কিরণ গনমাধ্যমের শীর্ষ চার সংগঠন থেকে বহিস্কার হন। একই সঙ্গে ভোরের কাগজের শামীম আহমেদের বিরুদ্ধেও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হয়। আজও তারা সদস্যপদ ফিরে পাননি। থেকে গেছেন অবাঞ্চিত।
ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে র্যাব ও ন্যাশনাল ফরেনসিক প্রধানের মতবিরোধ
সাগর-রুনি’র ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালকের দেওয়া বক্তব্যে নিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রফাইলিং ল্যাবরেটরী প্রধান অধ্যাপক শরীফ আখতারুজ্জামান। তিনি দাবি করে বলেন, সাগর-রুনি’র আলামতের ডিএনএ টেষ্ট ঢাকার ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রফাইলিং ল্যাবরেটরীতেই সম্ভব ছিল। র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানিয়েছিলেন, ‘এই ডিএনএ টেষ্ট বাংলাদেশে সম্ভব নয়।’
র্যাবের এমন বক্তব্যে দেশের আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ল্যাবরেটরী প্রধান অধ্যাপক শরীফ আখতারুজ্জামান। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শরীফ আখতারুজ্জামান আরো বলেন, কারিগরি মান, যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবলের বিবেচনায় আমাদের এই ল্যাব আন্তর্জাতিক মানের এবং যে কোন ধরনের আলামত থেকেই এখানে ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব। গত বছরের শেষ দিকে র্যাবের কর্মকর্তা এম সোহায়েল র্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাগর-রুনি’র ডিএনএ বাংলাদেশে সম্ভব ছিল না বলে মন্তব্য করেন।
১২.০৪.২০১৩