প্রতিবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রীরা যে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, এর প্রতিবাদ করার কোনো শোভন ভাষা আমাদের জানা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মঙ্গলবার দুপুরে দলের নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের সব ব্যাংক একাউন্টের লেনদেন সরকারি আদেশে প্রায় ৭ বছর ধরে বন্ধ থাকা, এর ফলে অনির্বাযভাবেই সৃষ্ট সমস্যাদি নিয়ে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দলটির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা নিয়ে সোমবার সংসদে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা যেসব মিথ্যা, অপ্রাসঙ্গিক, কুরুচিপূর্ণ ও নোংরা মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা জানানোর কোনো শোভন ভাষা আমাদের জানা নেই। তারা জনগণের ঘৃণা ও সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেননি।
তিনি বলেন, একজন বিশিষ্ট নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য সরকার দুঃখ প্রকাশ করার পরির্বতে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক এবং জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী, অপরাপর মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা অত্যন্ত অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, বাড়ি ভাড়া পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের অনুরোধ এনবিআর-এ এখনো অনুমোদিত না হওয়া ষড়যন্ত্রমূলক।
খালেদা জিয়ার ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ রাখাকে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক একাউন্টের লেনদেন সরকারী আদেশে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর বন্ধ রয়েছে। একাউন্ট জব্দ রাখার অন্যায় সরকারি কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন নিয়ে সরকার ও সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া থেকে প্রমানিত হয়- এ সরকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংসদে শুধু মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে অশোভন ভাষায় খিস্তি খেউর করা হয়। তারা বলেন, বিএনপি নাকি নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাই যদি সত্য হয়- তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই প্রতিদিন সংসদের ভেতরে-বাইরে বিএনপি এবং তার নেতাদের সম্পর্কে কথা বলে সময় নষ্ট করছেন কেন ? আসলে জনগণের আস্থাভাজন দল বিএনপিকে তারা ভয় পায় এবং সেই ভীতি থেকেই প্রতিনিয়ত তারা প্রলাপ বকে, আর জনগণের ঘৃণা কুড়ায়। অনুগত প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যায় সহযোগিতায় জোর করে নিজেদের নির্বাচিত দেখিয়ে তারা আজ যে ক্ষমতার দম্ভ করছে – তা ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা ।
খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এক এগারোর সময় খালেদা জিয়ার মতো শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে তার ব্যাংক একাউন্টও জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার ব্যাংক একাউন্ট সেই সরকার খুলে দিলেও এনবিআর’র কোন মামলা না থাকা সত্বেও দেশনেত্রীর জব্দ করা কোন ব্যাংক একাউন্ট অদ্যাবধি খুলে দেয়া হয়নি। এটা যে কোন নাগরিকের প্রাপ্য সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। গত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার এ অন্যায় আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অবিলম্বে একাউন্ট জব্দ করার অন্যায় আদেশ প্রত্যাহার না করার পরিবর্তে এ সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, অন্যায় এবং নিন্দনীয়।
বিএনপির এ নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার নামে যে ৮টি ব্যাংক একাউন্টের কথা বলা হয়েছে- তার ৬টি’তে তেমন কোন অর্থ জমা নেই এবং বহু বছর ধরে কোন লেনদেনও হয় না। এর মধ্যে শহীদ জিয়ার আমলের একাউন্ট ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রচলিত নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব একাউন্ট খোলা হয়েছিল। মাত্র দুইটি ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন হয় এবং সেখানে বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খাতে অর্জিত টাকা নিয়ামানুযায়ী জমা হয়। এক্ষেত্রে সবকিছু স্বচ্ছ ও আইনানুগভাবে পরিচালিত হওয়া সত্বেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা অহেতুক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে নিজেরাই নিন্দার পাত্র হয়েছেন। এটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড. আহমেদ আযম খান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহিন, মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।