জেলা পরিষদ অকার্যকর রাখা হয়েছে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের জন্যই জেলা পরিষদকে অকার্যকর রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার ফলে এটা রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত হয়ে এখন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর বিয়াম অডিটরিয়ামে ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জেলা পরিষদ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলেক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক রফিকুল হাসান।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জেলা পরিষদের কার্যকারিতা দুটি শক্তিশালী স্বার্থগোষ্ঠীর টানাপড়েনের শিকার হয়ে পড়েছে। একদিকে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যদের স্থানীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা ও কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রবণতা আর অন্যদিকে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশের কাছে জনগণের অংশীদারিত্ব মেনে নেয়ার মানসিকতার ঘাটতি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন নির্বাচিত পরিষদ গঠনে বিরত থেকে জেলা পরিষদ পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধকতা জিইয়ে রাখা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমন্বয়হীনতা ও অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। সর্বোপরি রয়েছে জেলা পরিষদ পর্যায়ে জবাবদিহিতার কাঠামোর অনুপস্থিতি।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকের কাজের সুষম বন্টন, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, অতীতে আমরা যখন ব্রিটিশদের অধীনে ছিলাম, তখন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী ও কার্যকর ছিল। তবে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবের কারণে তা অনেকটাই দুর্বল। আমরা চাই, কেন্দ্রীয় প্রভাবমুক্ত একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা।
টিআইবি’র পলিসি বিভাগের পরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার ফলে এটা রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা পরিষদ শক্তিশালী হলে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদও শক্তিশালী হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জেলা পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও জেলা পর্যায়ে ক্ষমতার কাঠামোতে এর দুর্বল অবস্থান এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে জেলা পরিষদ প্রত্যাশিতভাবে কার্যকর হয়নি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জেলা পরিষদকে শক্তিশালীকরণের কথা থাকলেও বাস্তবিক কোনো কৌশল বা পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি।
এছাড়া গবেষণায় জেলা পরিষদের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে আর্থিক সক্ষমতার অভাব, সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরতা, জেলা পরিষদের কর্মকাণ্ডে সংসদ সদস্যের উপদেষ্টা হিসেবে প্রভাব বিস্তার, রাজনৈতিক নেতা দ্বারা জেলা পরিষদের সম্পত্তি বেদখল, কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি এবং সরকারের প্রভাব বিস্তারের তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদকে কার্যকর করার লক্ষ্যে নয় দফা সুপারিশ উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: জেলা পরিষদ আইন’২০০০ এর সীমাবদ্ধতা সংশোধন পূর্বক পরিষদের ওপর সরকারের এখতিয়ার সুনির্দিষ্টকরণ, জেলা পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শূন্য পদ পূরণ, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ) সঙ্গে মাসিক সভা ও বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করার মাধ্যমে সমন্বয় সাধন, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সার্বিক ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন ইত্যাদি।