ইসির ইমেজ সঙ্কট

Election Commission নির্বাচন কমিশনসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ৪৫৮ উপজেলা নির্বাচনে সঠিকভাবে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সমন্বয়হীনতা, ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও ব্যাপক সহিংস ঘটনাসহ নানা কারণে ভয়াবহ ইমেজ সঙ্কটে ইসি।

এ বিষয়  নিযে বুধবার নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সহিংসতা হয়েছে। তবে পেশীশক্তি প্রয়োগের প্রবণতাকেই সহিংসতার জন্য বেশি দায়ী মনে করছেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসি কর্মকর্তাদের বিরোধের একাধিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইসি বলেন, যাদেরকে দিয়ে কাজ করবো তারা স্থানীয় প্রশাসন অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য না হলেই ভালো হতো।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোটের সব প্রস্তুতি নিয়েছিল তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছিল, এটা অস্বীকার করার জো নেই।

সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব বিভাগকে নিয়োগ করা হয়েছিল। এতো কিছুর পরেও কিছু দুষ্কৃতিকারী ও কিছু প্রার্থীর লোকজনের দ্বারা কিছু অনিয়ম হয়েছে। যার ফলে নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে-এক কথায় তা বলা যাবে না। কিছুটা অতৃপ্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অতীতের সব উপজেলা নির্বাচন পরিপূর্ণ্ভাবে সুষ্ঠু হয়েছে তাও বলা যাবে না।

তিনি বলেন, কেউ কেউ কোথাও কোথাও হয়তো দায়িত্বে অবহেলা করেছে, যার ফলে সঠিক বিষয়গুলো আমাদের সামনে ঠিক সময়ে উপস্থাপিত হয়নি। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাস্তব অবস্থাটা বলবে। ফিল্ড লেবেল থেকে অনিয়ম হয়েছে এমন রিপোর্ট পাইনি। যার কারণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিতে পারিনি।

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে করে যথাযথ প্রতিবেদন দিতেও কোথাও কোথাও মাঠ কর্মকর্তাদের সহায়তা ছিল না বলে তার অভিযোগ।

কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, আসন্ন ৬ষ্ঠ ধাপের ২২ উপজেলায় নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে এবার কমিশনের নিজস্ব জনবল নিয়োগ করা হবে। তাদের কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ের অনিয়মের সংবাদ পাওয়ার সাথে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

বর্তমান কমিশন নিজেই নিজেকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়ে ইমেজ সঙ্কটে ফেলেছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ডিসি ও এসপিরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা না মেনে ক্ষমতাসীন সরকারের জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নির্দেশমতে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অপর দিকে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ মনে করেন কয়েকধাপে নির্বাচন করা, নির্দলীয় নির্বাচনকে দলীয় নির্বাচনে রূপান্তর ও রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতা প্রভৃতি কারণে সহিংসতা হয়েছে। অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কমিশনকে এককভাবে দায়ী করা হচ্ছে। যা কোনো অবস্থায়ই সঠিক নয়।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের বিভিন্ন নির্বাচনে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও এ উপজেলা নির্বাচনে প্রায় ৮-১০ জনের প্রণহানি ঘটেছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আর বিতর্কের অবসান না ঘটলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে না।

অন্যদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ড. কলিম উল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত করেছে। স্থানীয় নির্বাচনকে বড় রাজনৈতিক দল যুদ্ধের লড়াই মনে করে। আর বড় দুই দল মনে করে জনপ্রিয়তায় কে বেশি তা প্রমাণ করতে হবে স্থানীয় নির্বাচনেই।

তিনি বলেন, এ জন্য উপজেলা নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে দুই দল অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ কারণে সহিংসতা বাড়ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচনকে দলীয়করণ তথা দলীয় রূপ দেওয়ায় সংঘাত তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের কোন্দল প্রকাশ পাচ্ছে। তৃণমূলে নেতৃত্ব তৈরির পথ বন্ধ হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন ইসি যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিত তবে নির্বাচন দলীয়করণমুক্ত হতো।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ