গ্রাহকরা খুচরা টাকা নিয়ে বিপাকে
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েন ও খুচরা টাকা নিচ্ছে না। যার কারণে বিভিন্ন কম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর, বাজারজাতকারক, মোবাইল ফোনে রিচার্জকারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুচরা টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, এক সঙ্গে ৫০ হাজার ও এক লাখ পিস দুই, পাঁচ টাকার কয়েন ও নোট ব্যাংকগুলো নিচ্ছে না। ব্যাংকগুলো না নেওয়ায় খুচরা টাকা তাদের কাছে অলস হয়ে পড়ে আছে। আর এসব টাকা ও কয়েন সচল করতে গ্রাহক বাধ্য হয়ে দালাল ধরে শতকরা ৫ থেকে ৩০ টাকা কমিশন দিয়ে খুচরা টাকার বোঝা নিজের কাঁধ থেকে নামাচ্ছেন। এতে তারা যেমন ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন তেমনি হন হয়রানির শিকার।
আবার অনেকে নিজের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে কমিশন দিতে রাজি না হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এলেও কোনো সূরাহা হয়নি। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছেঁড়া নোট নেয়, ভালো নোট নেয় না। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে বেশ কয়েকজন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংককে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগে এসব বিষয়য়ে লিখিত ও ফোনে নালিশ করেছেন। সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এমনি এক অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইসলাম স্টোরের স্বত্তাধিকারি মো. ইসলাম। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রতিষ্ঠান দুই টাকার নোট এবং এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন মিলে মোট ৩০ হাজার টাকা পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম, পাহাড়তলী শাখায় জমা দিতে গেলে ব্যাংক তা গ্রহণ করেনি। এর ফলে তিনি চরম হয়রানির শিকার হন। একই সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
আরও একজন ভুক্তভোগী কুষ্টিয়ার তন্ময়। তিনি ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের ডিস্ট্রিবিউটার। ছোট ছোট পান-সিগারেট ব্যবসায়ীদের সাথেই তার লেনদেন। প্রতিদিন এসব ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে পাওয়া কয়েন জমতে জমতে এক সময় তা এক লাখ টাকায় পরিণত হয়। এ টাকা নিয়ে তিনি কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরে ঘুরেও জমা দিতে পারেননি। তবে খুচরা টাকার বদলে বড় নোট দেয় এমন দালালের খোঁজ পান। ওই লোকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা বিনিময়ের জন্য ৫ শতাংশ হারে টাকা চান।
এ ব্যাপারে তন্ময় বলেন, ‘ভালো টাকা শুধু খুচরা টাকার বিনিময়ে গোটা টাকা নেওয়ার জন্য যদি ৫ শতাংশ হারে দালালকে দিতে হয় তাহলে তার ৫ হাজার টাকা ঘর থেকে দিতে হবে। কয় টাকা আর বেতন পায় যে, শুধু খুচরা টাকার কারণে জরিমানা গুনতে হবে।’
এতে করে তিনি দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘এগুলো ব্যাংক কর্মকর্তাদেরই কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয়।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, কুষ্টিয়ায় টাকা বিনিময়ের জন্য ৫ শতাংশ দাবি করেছে। ঢাকায় দুই টাকা নোটের এক লাখ টাকা বিনিময় করার জন্য ৫০ শতাংশ দাবি করেছিল। সর্বশেষ ৩০ শতাংশের নিচে নামতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, বেশকিছু সংখ্যক লোক খুচরা টাকা নিয়ে বিনিময়ে বড় নোট নেওয়ার জন্য মতিঝিল শাখায় এসেছিল। কিন্তু তারা তা দিতে পরেনি। কারণ মতিঝিল শাখায় ছেড়া-ফাটা নোটের বিনিময়ে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ভালো খুচরা নোটের বিনিময়ে বড় নোট টাকা দেওয়া হয় না।
এদিকে, এ সমস্যটি দেশের জাতীয় সমস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশ থেকেই এমন হাজারও অভিযোগ আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এ সমস্যার সমাধান চেয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে সর্বসাধারণের সুবিধার্তে দ্রুত বিষয়টি সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম বলেন, ‘গ্রাহকের সুবিধার্থে যে কোনো নোট বা কয়েন জমা দিতে গেলে ব্যাংকগুলো তা নিতে বাধ্য। যদি ব্যাংকগুলো জমা নিতে না চায় এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাছাড়া এ ধরনের সমস্য যেন আগামীতে না ঘটে সে ব্যবস্থাও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করবে।’
তবে তিনি বলেন, ‘কিছু বাস্তবতাও আছে। এক সাথে দুই টাকার নোট এক লাখ টাকা নিয়ে গেলে ব্যাংকগুলো বিরক্ত হতেই পারে। তাই তিনি গ্রাহকের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ খুচরা টাকা জমা হয় সে পরিমাণ নিয়ে গেলে ব্যাংকগুলোর জন্য ভালো হয়।’