বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার অনশন করবেন শিক্ষকরা
ঢাকা: প্রায় ৭ হাজার নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে লাগাতার অনশন করবেন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। ওই দিন সকাল ১১টা থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বুধবার বিকেল ৪টায় লাগাতার তৃতীয় দিনের অবস্থান ধর্মঘট শেষে রাজধানীর তোপখানা রোডে সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনের নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডু।
এর আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকে তাদের অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। পরে তারা প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে তোপখানা রোডের নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন।
আন্দোলনকারী নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা সমাবেশে বলেছেন, তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ এলাকা ছেড়ে যাবেন না।
তবে পৌনে ৩টার দিকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ফের মিছিল বের করার চেষ্টা চালালে পুলিশ ৮/১০ রাউন্ড টিআরশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষকদের কর্মসূচি শেষ হয়ে গেলেও পুলিশ এখনো প্রেসক্লাবের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ-ৠাব সদস্য অবস্থান নিয়ে রাস্তাটি আটকে রাখায় যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। এতে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট অব্যাহত রয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এর আগে দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলা শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশেপাশের এলাকা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে প্রেসক্লাব, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়, সেগুন বাগিচার বিভিন্ন গলি, হাইকোর্ট মোড়, কদম ফোয়ারাসহ আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের প্রতি শিক্ষকদের ইট-পাটকেল এবং পুলিশের টিয়ারশেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনায় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা দেয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় ৭ হাজার নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির দাবিতে নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গেলে এ সংঘর্ষ বেধে যায়। দুপুর ১টায় মিছিল নিয়ে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মন্ত্রণালয় দু’টির উদ্দেশ্যে রওনা হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সামান্য দূরে অগ্রসর হওয়ার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। শিক্ষক-কর্মচারীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতে চেষ্টা করলে টিয়ারশেল ও গরম পানি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় শিক্ষকরাও ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে তাদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। এরপর ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিআরশেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।
এ সংঘর্ষে ২০/২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ৫ জনের গায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। অন্যদিকে ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি শিবলী নোমানসহ কমপক্ষে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন ইটপাটকেলের আঘাতে। এছাড়া পাশে চলমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের অন্য একটি কর্মসূচিতে আসা বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজির ছাত্র শাওনের মাথা ইট লেগে ফেটে যায়। আহত শিক্ষকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রমনা জোনের ডিসি নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শিক্ষকদের ঘেরাও কর্মসূচিতে আমরা নমনীয় ছিলাম। কিন্তু তারা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের ওপর যেভাবে আক্রমণ করেছেন, তা শিক্ষকসূলভ আচরণ না।’’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘জামায়াত-শিবির অরাজক পরিস্থিতি করতে চেয়েছিলো।’’ জামায়াত-শিবির কিভাবে ঢুকলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ওপর যেভাবে হামলা করছে জামায়াত-শিবির, আজকের হামলাও তারই প্রমাণ।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কোনো শিক্ষককে এখনো আটক করিনি। তবে জামায়াত-শিবিরের কোনো কর্মীকে পেলে আমরা আটক করবো।’’
এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমাদের কর্মসূচিতে শিক্ষক-কর্মচারীরাই ছিলেন। জামায়াত-শিবির ছিল না। বরং পুলিশই আমাদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে প্রথমে নিজেদের এজেন্ট দিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়িয়েছে। এর পর হামলা করেছে নিরীহ শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর।’’
এর আগে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের চলমান লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তৃতীয় দিনের মতো এ অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এশারত আলী এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডুর নেতৃত্বে হাইকোর্টের মোড় থেকে শুরু করে পল্টন পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক পাশের রাস্তায় প্রায় ২০০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশ শুরু করেন। এর ফলে পুরো এলাকার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা ১টার পরে শিক্ষক-কর্মচারীরা মিছিল সহকারে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট শেষে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা।
একই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীরা অর্থ ও শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ এবং মঙ্গলবারের শিক্ষা ভবন কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপকারী পুলিশ সদস্যদের অপসারণও দাবি করেন।
উল্লেখ্য, সোমবার সকাল থেকে পল্টন মোড় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলছে। মঙ্গলবার পুলিশ শিক্ষাভবন অভিমুখে বের করা মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আটকে দিয়ে শিক্ষাভবন ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। শিক্ষক-কর্মচারীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙতে চেষ্টা করলে টিয়ারশেল ও গরম পানি ছোড়ে পুলিশ।
এতে করে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে প্রেসক্লাব এলাকায়। পুরো এলাকার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে ছিল কয়েক ঘণ্টা।
শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্য প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না এবং দাবি মেনে না নিলে পরে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবেন।