সাঈদীর মামলা মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পাঁচ বছরের মেয়েওতো ধর্ষিতা হতে পারে উল্লেখ করে সাঈদীর আইনজীবীর প্রতি প্রশ্ন করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এ সময় সাঈদীর মামলায় গৌরাঙ্গ সাহার ছোট বোন তো যুবতি ছিল না, তাহলে তিন জন অল্প বয়সী কিভাবে ধর্ষিতা হয়েছিল। কারণ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রসিকিউশনের সাক্ষী গৌরাঙ্গ সাহার বয়স ছিল মাত্র আট বছর। যারা ধর্ষিতা তারা সকলেই তার ছোট বোন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিখণ্ডন শেষে তার পক্ষে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে সাঈদীর আইনজীবী।
পরে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত রেখে মামলার কার্যক্রম আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়।
রোববার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শুনানিতে সাঈদীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান আদালতের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রসিকিউশনের সাক্ষী গৌরাঙ্গ সাহা ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৮ বছর। সাক্ষী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ছোট তিন বোনকে নিয়মিতভাবে সাঈদী ধর্ষণ করতো। সুতরাং সাক্ষী গৌরাঙ্গ সাহার বয়স যদি সে সময় ৮ বছর হয়, তাহলে তার ছোট তিন বোনের বয়স যথাক্রমে ৭, ৬ ও ৫ এর বেশি হবে না।
আইনজীবী বলেন, একজন ৫ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা কি সম্ভব? এটাতো প্রশ্নবিদ্ধ এবং অসম্ভব ব্যাপার। তখন বিচারপতি আইনজীবীকে এই প্রশ্ন করে বলেন, পাঁচ বছরের মেয়েওতো ধর্ষিতা হতে পারে। তখন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সেটা যাইহোক আমাদের বিষয় না।
আইনজীবী বলেন, কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আসামিপক্ষের দেয়া ডকুমেন্টসগুলো ট্রাইব্যুনাল অবিশ্বাস করেছে’ আদালত জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া এক সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদীর দুটি ছেলে সন্তান ছিল। অথচ জাতীয় সংসদে জমা দেয়া হলফনামায় সাঈদী বলেছেন, তার বড় ছেলের জন্ম ১৯৭০ সালে এবং দ্বিতীয় ছেলের জন্ম ১৯৭২ সালে। এখানে সাক্ষী ও সাঈদীর দেয়া তথ্যের মধ্যে গড়মিল।
তিনি বলেন, শুধু এই একটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই ট্র্রাইব্যুনাল সাঈদীর পক্ষে দেয়া ডকুমেন্টস অবিশ্বাস করেছে।
আইনজীবী বলেন, সাঈদীর জীবনের ৭৫ বছরেও কোথাও কখনও শিকদার নামটি ব্যাবহার করেছে এমন একটি কাগজের টুকরাও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। ১৯৫৭ সালে তার জীবনের সর্বপ্রথম সরকারি স্বীকৃতি দাখিল পাশের সনদেও তার নাম দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বাবার নাম ইউসুফ সাঈদী ছিল। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন সাঈদীর নাম দেলওয়ার শিকদার ছিল।
তিনি বলেন, সাঈদী বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের পর কোনো দলিলপত্রে কিংবা বইয়ে রাজাকার হিসেবে আমার নাম উল্লেখ নেই।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আপিল বিভাগে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তির্তক উপস্থাপন করেন। ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সাঈদীর মামলায় প্রথম আপিল শুনানি শুরু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ র্মাচ আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপিল দাখিল করেন।