যে কোনো দিন সাঈদীর আপিলের রায়
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আপিলের রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে।
বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে মামলাটি রায়ের জন্য (সিএভি) যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে ঠিক করেন।
এর আগে মঙ্গলবার উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
তবে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলার নথি তলব চেয়ে উভয়পক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আদেশের জন্য বুধবার নির্ধারিত দিন ধার্য্য ছিল আপিল বিভাগে।
আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাকে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।
আসামিপক্ষের শুনানিতে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান।
এর আগে ১৯৭২ সালে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর করা হত্যা মামলায় দাখিলকৃত চার্জশিটের কপি আদালতে উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ এ মামলার জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) তলব করার আবেদন করেন।
তবে আসামিপক্ষের এ আবেদনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, জিআর তলব না করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের নথি তলবের আবেদন করেন।
অ্যাটর্নি বলেন, আসামিপক্ষ যে ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন তা মিথ্যা। কেননা, তাদের ডকুমেন্টে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কোন নম্বর নেই।
তিনি বলেন, বরিশালের আদালত ঘুরে এসেছি। তাতে এ ধরনের কোন ডকুমেন্ট নেই। তাই তিনি আসামিপক্ষের আবেদন গ্রহণ না করার দাবি করেন।
এর আগে বিচারপতি এসকে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেলের দাখিলকৃত ডকুমেন্ট বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আপনি এক দিকে বলছেন- আসামিপক্ষের ডকুমেন্ট মিথ্যা, অন্যদিকে ওই মামলার নাম্বারও লিখেছেন।
এ সময় বিচারপতিরা আসামিপক্ষকেও তাদের ডকুমেন্ট নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেন।
আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের ডকুমেন্ট মিথ্যা না সত্য তা যাচাই করতে জিআর তলব করেন। তাহলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আদালতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা আগায় না থেকে গোড়ায় হাত দেন্। নথি তলব করেন- সত্য হলে গ্রহণ করবেন।
এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন এ মামলার অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
ট্রাইব্যুনালের গেটের সামনে থেকে আসামিপক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জণবালীকে তুলের নেয়ার ঘটনা বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। কাল তলবের বিষয়ে আদেশ।
তিনি বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি, তার বিচারিক আদালতের দেয়া শাস্তি বহাল থাকবে।
প্রসঙ্গত গত ১৩ এপ্রিল ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে দায়ের করা মামলার চার্জশিটের কপি আদালতে দাখিল করেন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
ওই চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন-দানেশ মোল্লা, আশরাফ আলী, আব্দুল মান্নান, কালাম চৌকিদার, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন ও মোসমেল মওলানা।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে গত ১০ এপ্রিল যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আপিল বিভাগে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তির্তক উপস্থাপন করেন।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সাঈদীর মামলায় প্রথম আপিল শুনানি শুরু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপিল দাখিল করেন।