আমিনুল হত্যা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্তরায় হতে পারে জিএসপি’র
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পোশাক শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার বিচার, বাংলাদেশে বিরাজমান গণতন্ত্র ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে বলে মনে করছেন দেশের অর্থনীতিবীদরা। এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও। গতকাল তিনি জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় না নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক ৫টি সংগঠন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ই-মেইলে সংগঠনগুলো মোট ৩টি চিঠি পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ৩টি সংগঠন একটি এবং অন্য দুই সংগঠন পৃথক দুটি চিঠি পাঠায়। ওই সব চিঠিতে আমিনুল ইসলাম হত্যার সঠিক তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের কথা বলা হয়েছে । অপরদিকে আমিনুলের হত্যার বিষয়ে সিআইড পুলিশের দেওয়া চার্জশিটকে প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিক সংগঠন ‘কমিটি ফর জাস্টিস ফর আমিনুল ও আমিনুলের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে আমিনুল হত্যার বিচার, বাংলাদেশে বিরাজমান গণতন্ত্র ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে বলে মনে করছেন দেশের অর্থনীতিবীদ সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীত ফেলো ড. দেব প্রিয় ভট্রাচাযর্, ও সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
ড.আকবর আলী খান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যার সুুষ্ঠু বিচারের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসনের। এটাকে হাল্কাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে বিরাজমান গণতন্ত্র ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বর্হিবিশ্বে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মার্কিন বাণিজ্য দফতর থেকে জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশকে ১৬টি শর্ত বেঁধে দেয়। এর পর দেশটির সিনেটে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিরাজমান গণতন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো অন্তরায় হতে পারে।
সিপিডি’র সম্মানীত ফেলো ড. দেব প্রিয় ভট্রাচার্য এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির শুনানিতে শ্রম পরিস্থিতির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিরাজমান গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে বলা হয়। অন্যথায় জিএসপি সুবিধা নয় বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে এর পর থেকেই বাংলাদেশের বানিজ্য দপ্তর নড়ে-চড়ে ওঠে এবং জিএসপি সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় না নেওয়ার আহবান জানানো হয়।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, গত বছর জিএসপি স্থগিতের সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়েছিল। সুতরাং ১৬ শর্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি তারা বিবেচনায় আনবেই। আমাদের এখন উচিৎ হবে দেশের রাজনৈতিক পরিসিস্থতি বিশেষ করে যেসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে, তার দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া হয়তো জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে শ্রমিক সংগঠক আমিনুল ইসলাম হত্যার অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিক সংগঠন কমিটি ফর জাস্টিস ফর আমিনুল ও আমিনুলের পরিবারের সদস্যরা। খুনের ঘটনায় পলাতক মোস্তাফিজুর রহমানকে আসামি করে সিআইডি পুলিশ গত নভেম্বরে টাঙ্গাইল জেলা ওদায়রা জজ আদালতে আমিনুল হত্যার বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে।
আমিনুল ইসলাম ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সংগঠক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনে নেতা ছিলেন। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল আশুলিয়া থেকে নিখোঁজের একদিন পর তার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা এলাকায়।