মিল্কি হত্যার চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেবে ক্ষুব্দ পরিবার

milki মিল্কিসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মিল্কী হত্যা মামলায় চার্জশিট থেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই প্রভাবশালী নেতা টিপু-আরিফকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্দ পরিবার এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। নিহত মিল্কির মা জাহানারা এরশাদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেছেন, তারা শিগগিরই র‌্যাবের দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন জানাবেন। নিহতের ভাই মামলার বাদি মেজর রাশেদুল হক খান চার্জশিটের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যায় গত ১৫ এপ্রিল র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. কাজেমুর রশীদ ১১ জনকে আসামি আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। এতে মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলকে এক নম্বর আসামি করা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফের নাম বাদ দেওয়া হয়।
এবিসি নিউজ বিডি’র সঙ্গে আলাপকালে নিহতের পরিবার র‌্যাবের দেওয়া এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে শিগগিরই তারা নারাজি দেবেন বলে জানান। ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা বলেন, এই নির্মম হত্যাকান্ডের মূল দুজন পরিকল্পনাকারী সরকারী দলের প্রভাবশালী হওয়ায়, চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেওয়া মামলার এজাহারে তাদের নাম ছিল। র‌্যাব কি কারনে তাদের নাম বাদ দিল তাও নিহতের পরিবার বুঝে উঠতে পারছেন না বলে জানান।
নিহহতের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলছেন, তদন্তকারী সংস্থা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। তারা কৌশলে মূল আসামি আরিফকে বাদ দিয়ে অন্য আরিফের নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দিয়েছে, যাতে কেউ বিষয়টি টের না পায়। অথচ পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে টিপু ও আরিফের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিহত মিল্কির মা জাহানারা এরশাদ বলেন, ‘তদন্তকারীরা তদন্ত করেছে। তবে আমাদের বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। পরিকল্পনামাফিকই তারা খুনি টিপু ও আরিফের নাম বাদ দিয়েছে।’ একটি পক্ষ মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাহানারা এরশাদ আরো বলেন, ‘আমরা শিগগিরই এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন জানাবো।
নিহতের ভাই এই মামলার বাদি মেজর রাশেদুল হক খান প্রইমনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, ‘চার্জশিট নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো আমিও সংক্ষুব্ধ। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে যাব।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়ার আদালতে মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলকে প্রধান আসমি করে ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে নয়জনকে বাদ দেওয়ার জন্য অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, নিহত রিয়াজুল হক খান মিল্কী এবং আসমি জাহিদ সিদ্দিক তারেক ওরফে কিলার তারেক একত্রে রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় রাজনীতি করতেন। মিল্কী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাহিদ সিদ্দিক তারেক ওরফে কিলার তারেক সংগঠনের ওই কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ কারণে এলাকার আধিপত্ত বিস্তার, সাংগঠনিক পদ ও জমি দখল, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ ভাগ-বণ্টন সংক্রান্তে তাদের মধ্যে চাপা বিরোধ চলছিল।
চার্জিশিটে এছাড়াও উল্লেখ করা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মতিঝিলে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভিকটিম রিয়াজুল হক খান মিল্কী কমিশনার পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বিরোধ প্রাকাশ্য রূপ নেয়। তখন থেকে এলাকায় যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিহত রিয়াজ ও কিলার তারেকের পক্ষে আলাদা মিছিল-মিটিং হতো।
চার্জশিটে আরো বলা হয়, কিলার তারেকের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক নানা বিষয়ে অতি ঘনিষ্ঠতা ছিল যুবলীগ নেতা গুলশানের সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। আর এ কারণে কিলার তারেকের পক্ষ হয়ে মিল্কীকে ঘায়েল করার জন্য পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন চঞ্চল।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ