আবারও খালেদার নির্বাচন দাবি

Khaleda Zia Laborerসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বিগত নির্বাচনে শুধু ১৯দলীয় জোট নয়, অনেক ছোট-খাট দলও অংশ নেয়নি। সেখানে অধিকাংশই বিনা ভোটে জয়ী হয়েছে। বর্তমান সরকার জনসমর্থনহীন অবৈধ সরকার। গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্যই এবং গণতন্ত্রের স্বার্থেই অবিলম্বে এ দেশে আরেকটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র নেই বলে আজ দেশের এ অবস্থা। যখন তখন যেনোতেনোভাবে আজ বদলি করা হচ্ছে, মানুষ কথা বলতে পারছে না। আইনের শাসন অনুপস্থিত। যারা সত্যি কথা বলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তাদের গুম করা হয়। তাদের কারও লাশ পাওয়া যায়- আবার কারওটা পাওয়া যায় না। কোনো মানষের জীবনই আজ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া ঘরে কী বাইরে কেউ নিরাপদ নয়।

সৈয়দ রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা বলেন, তাকে ছেড়ে দিয়ে সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। তাকে মুক্তি না দিলে এমন আন্দোলন শুরু হতো যা কেউ ঠেকাতে পারতো না।

তিনি তার দলের নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের কাছে সব খুন-হত্যা-গুমের হিসাব আছে। সময় মতো সব হিসাব চুকিয়ে নেয়া হবে।

খালেদা জিয়া সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের সবার দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। যা করছেন সবকিছুর হিসাব দিতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণকে আহ্বান করেছিলাম একতরফা নির্বাচনে না যেতে। তারা আমাদের কথা রেখেছেন, তারা ভোটকেন্দ্রে যাননি। এমনকি যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন সেই আওয়ামী লীগের লোকজনও ভোটকেন্দ্রে যাননি।

দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার আজ শুধু জনগণ থেকেই বিচ্ছিন্ন নয়, সারাবিশ্ব থেকেও বিচ্ছিন্ন।

খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে পার পাবে না আওয়ামী লীগ। এই সরকারকে দ্রুত বিদায় নিতে হবে এবং জনগণের কাছে হিসাব দিতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, সময় থাকতে গুম, খুন, নির্যাতন বন্ধ করুন। আমরা আপনাদের ক্ষতি চাই না, এখনও সময় আছে- তাই আপনাদের অনুরোধ করব দেশের মানুষের উপর আর নির্যাতন করবেন না। সন্তানহারা মায়ের চোখের কান্না বৃথা যেতে পারে না। এর ফল হয় খুব ভয়াবহ।

বিএনপি নেত্রী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আপনাদের শেষ ভরসা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, গুন্ডালীগ আর অস্ত্র। আপনারা যে অস্ত্র আমাদের দিকে তাক করেছেন, কয়দিন পরে এসব অস্ত্র দেখা যাবে না। আমাদের দিকে তাক করা অস্ত্র আপনাদের দিকেই যখন ফিরে যাবে।  তখন আপনারা যাবেন কোথায়। তাই সময় থাকতে  আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সুন্দর দেশ গড়তে আসুন একসাথে কাজ করি। অতীতেও আমরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কাজ করেছি। আমরা পারবো।

রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত  ক্ষতিপূরণ পায়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা অনেকেই আমার অফিসে এসেছে।  আমরা বিরোধী দলে থাকার পরও তাদেরকে আমাদের মতো করে সাহায্য করেছি। আর সরকার তাদের ছবি ও প্রচার দেখানো জন্য মিডিয়ার সামনে দু-একজনকে সাহায্য দিচ্ছে তা দেখিয়েছে। আমরা খারাপ থাকলেও রানা প্লাজার মালিক আওয়ামী লীগ করায় ভালো আছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলো এখন বিদেশি মালিকদের হয়ে যাচ্ছে। পরে তারা এ দেশি শ্রমিকদের রাখবে না। তাদের দেশের শ্রমিক এনে কাজ করাবে।

বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে এখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। নুতন কোন কল-কারখানা নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে মানুষ যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবার জন্য সরকারকে দায়ি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তারা বলেছে- এই অবৈধ সরকারের সময়ে কোন শ্রমিক নেবে  না। সরকারের একটি অন্যায় কাজের জন্য আমরা তা হারিয়েছি। সেখানে নতুন লোকতো যাচ্ছেই না যারা ছিলো তারাও খালি হাতে ফিরে আসছে।

তিনি বলেন, সরকারের লজ্জা থাকলে তাদের উচিত হবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা নিজেদেরকে জনপ্রিয় মনে করেন, তাহলে নির্বাচনই  তো হচ্ছে- জনপ্রিয়তা যাচাই করার পথ। কিন্তু তারা তা করবে না। কারণ, তারা পাঁচ বছরে যে অন্যায়-দূর্নীতি করেছে- সে জন্য তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়।

খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের চাপে পড়ে পত্রিকাগুলো লিখছে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খারাপ। কিন্তু আমি বলবো, আমাদের সংগঠন অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।

সংগঠন পূর্নগঠন ও শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংগঠনে অনেক যোগ্য নেতা তৈরি হয়েছে। সেজন্য যুবক নেতৃত্ব দরকার। প্রতিনিয়ত যুব নেতা নেতৃত্বে না আসলে সংগঠন স্থবির হয়ে যাবে। তাই যারা আন্দোলনের সামনের কাতারে থাকতে পারবে তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে। শ্রমিক দলের মতো যুবকদের নেতৃত্ব আমাদের বেশি প্রয়োজন। শ্রমিক দলের কাউন্সিলে যোগ্য নেতাকে নির্বাচিত করার আহ্বান যানান তিনি।

পদধারী প্রবীণ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যুবকদের নেতৃত্বে আনলেও বয়স্কদের ফেলে দেয়া হবে না। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। তারা উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের উপদেশ দেবেন, তাদেরকে অন্য পদ দেয়া হবে। সারাদেশে সব সংগঠনকে এভাবে সাজাতে হবে।

নদীর পানি নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্ম, মেঘনা, যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে পানি আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। বিকল্প পানির ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে। পানি সংরক্ষণ করতে না পারলে দেশের কৃষি, কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভুত হবে। তাই আমরা ক্ষমতায় গেলে পানি ধরে রাখার বিকল্পব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অনেক করেছেন, আপনাদের আহ্বান জানাই আসুন সবাই মিলে দেশটাকে গড়ে তুলি। এ দেশ আমাদের আপনাদের সবার।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাফর,  শ্রমিক দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি আবুল কাশেম, শ্রমিক দলের সহাসভাপতি মজিবুর রহমান সরোয়ার প্রমুখ ।

শ্রমিক দলের জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান প্রমুখ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ