জ্বিনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণা

Frod প্রতারকরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাবারে আমি জ্বিনের বাদশা বলছি, তুই বড়ই ভাগ্যবান, ৭ ডেক্সি টাকা পাবি, একটা স্বর্ণের পুতুল পাবি, কোটিপতি হয়ে যাবি, সারাজীবন পায়ের ওপর পা তুলে বসেবসে খাবি। এই সম্পদ তোর নামে লেখা হয়েছে, তুই ছাড়া  অন্য কেউ ভোগ করতে পারবে না। অন্য কাউকে বলতে পারবি না, কারো সঙ্গে আলাপ করলে তোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। মাজারে সিন্নি খাওয়াতে হবে, পশু  কোরবানী দিতে হবে, এজন্য ৪ লাখ টাকা বিকাশ করে দে, নইলে তোর ওপর আল্লার গজব নাজিল হবে, তুই ধ্বংস হয়ে যাবি। রানা প্লাজার মতো তোর দালানকোঠা ধ্বসে পড়বে, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে তোর ছেলেমেয়ে মারা যাবে।

এক নাগারে এমনই হাজারো ভয়ভীতির কথা বলতে থাকলে এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষ টাকা দিতে সম্মতি জানায়। এভাবে জ্বিনের বাদশা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছিল।

এমনই কথিত জ্বিনের বাদশাদের রাজধানীর নিউমার্কেট ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। গ্রেফতারকৃতরা হলেন আপন দুই ভাই আবু মিয়া (২২) এবং মিলন মিয়া (২৪)।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে প্রতারণা করে টাকা গ্রহণ করতে আসা জ্বিনের বাদশা পরিচয়দানকারী আবু মিয়াকে(২২)গ্রেফতার করা হয়।

তার দেহ তল্লাশী করে দুটি নকল স্বর্ণের মূর্তি, ৪ লাখ টাকার বিকাশের রসিদ এবং মোবাইলের সিম কার্ডসহ দুটি মোবাইল পাওয়া যায়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, জ্বিনের বাদশা প্রতারক চক্রের অপর সদস্য তার আপন ভাই মিলন মিয়াকে (২৪) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাব-১৩ এর সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে র‌্যাব-২ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে র‌্যাব-২ এর কাছে অভিযোগ আসে যে জ্বিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্র গভীর রাতে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে কল করে নিজেকে জ্বিনের বাদশা পরিচয় দেয়, ভুঁয়া দোয়া কালাম পড়ে, ভিন্ন কায়দায় কথা বলে এবং বিপুল সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। পরবর্তী সময় তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বর কিংবা বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসে টাকা পাঠাতে বাধ্য করে।

এমনই এক জন কল্পনা আক্তার সুইটি (৩৫) জ্বিনের বাদশা চক্রের প্রলোভনে ৪ লাখ টাকা দেয়। তার কাছে পুনরায় তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করলে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি র‌্যাব-২ এ অভিযোগ করেন। এ অভিযোগ পেয়ে প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃত জিনের বাদশা ও তার সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, গোবিন্দগঞ্জের দরবস্ত ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামের (পশ্চিম পাড়া, কান্তিপুর, সোনাইপাড়া ইত্যাদি) অধিবাসীরা এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে এভাবে জ্বিনের বাদশা ও তার অদৃশ্য ক্ষমতার ভয়াবহতার কথা বলেয়ে মানুষকে বশীভূত করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া।

গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, জ্বিনের বাদশা প্রতারক চক্রের দলনেতা আজমল(৫৫)। তিনি আগে পুতুল ব্যবসা করতেন। পিতলের পুতুল স্বর্ণের বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করত এবং কিছু দিনের জন্য মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিত। গত ২ বছর যাবৎ এই চক্রটি জ্বিনের বাদশা সেজে শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করে। দলনেতা আজমলের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল আবু মিয়ার আরও ৩ ভাই শহিদুল মিয়া (২৭),  মিলন  মিয়া (২৪), সাবু মিয়া (২০) এবং একই এলাকার শাহিন মিয়া (২৪), ফরিদুল মিয়া (২৬), আমিরুল ইসলাম (২৭) ও ঠান্ডা মিয়া (২৬)। তাদের প্রত্যেকের কাছে ৫০টির বেশি সিম কার্ড থাকে। মোবাইলে এই সিম কার্ড ব্যবহার করে তারা দিনের বেলায় অজ্ঞাত নম্বরে ফোন করে জেনে নিত স্থান ও নাম।  অতঃপর গভীর রাতে ফোন করে জ্বিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতো।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, অল্প সময়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় কিংবা সম্পত্তি পাওয়া যাবে এই ধরনের সুযোগ প্রদানকারীদের মিষ্টি কথায় না ভুলে আমাদের সকলকে আরও সচেতন হতে হবে। যে কেউ এ ধরনের প্রস্তাব দিলে তা সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে এ প্রতারণা কমিয়ে আনা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা অপরাধীদের একটি পুরাতন কৌশল। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে প্রতারকরাও তাদের কৌশলে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। অনেক ধরনের প্রতারণার মধ্যে জ্বিনের বাদশা অদৃশ্য করাসাজিতে যেকোনো সমস্যার সমাধান করার কথা প্রায় সময় শোনা যায়। এরা মোবাইল ফোন, স্বর্ণ মূর্তি ইত্যাদি নানা জিনিস প্রতারণার অংশ হিসেবে ব্যবহার করে বিকাশ ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে। সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে পূজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কষ্টার্জিত উপার্জন বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই র‌্যাব এ ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ