মন্ত্রী কীভাবে জানেন সাঈদীর রায়ের ব্যাপারে

sayedee সাইদীসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দুই একদিনের মধ্যেই একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার আপিলের রায় ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

শুক্রবার এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মোশাররফ হোসেনের এ বক্তৃতার পর আলোচনার ঝড় ওঠে।

জনসাধারণ বলছেন, আসলেই কী দু’একদিনের মধ্যেই সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। রবি ও সোমবারের মধ্যে যদি রায় দেয় তাহলে দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে রায়ের পর। রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকছে না কী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড পরিবর্তন হচ্ছে। এমন নানা প্রশ্ন করছে একজন আরকজনকে। চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরা, বাস টার্মিনালসহ সর্বত্রই এ বিষয়ে আলোচনা।

অনেকেই বলছেন, যেহেতু মন্ত্রী এমন স্পর্শকাতর রায় নিয়ে বলছেন, হয়তো তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতির কাছ থেকে জেনেই বলেছেন। তা না হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার রায়ের বিষয়ে জানালেন কী করে। নিশ্চয় তিনি মামলার আপডেট জানেন।

দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শমসুল ইসলাম, রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়ক ও সরকারের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রী সাঈদীর রায়ের বিষয়ে কী জানেন?

শুক্রবার মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা রামদয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মিরসরাইসহ সারাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে যুদ্ধপরাধীদের বিচার কাজ চলছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে মিরসরাই থেকে উপজেলা ভিত্তিক সর্বোচ্চ সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করে।

সাঈদীর রায় নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাঈদীর মামলার রায় কী মন্ত্রী দেবেন না আমি দেব। আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি কী বলবো। আমি কী ঝগড়ার জন্য কথা বলবো। আমরাতো একই মতের লোক।

তিনি বলেন, সাঈদীর মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার জন্য সিএভি করে যেকোন দিন ঘোষণা করা হবে মর্মে রেখে দিয়েছেন। সেখানে আমিসহ আরও অনেকে ছিল, সাংবাদিকরা ছিল এবং বিষয়টা সকলেই জানেন।

সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শমসুল ইসলাম বলেন, সাঈদীর মামলার রায় সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবেও আমার কোনো অধিকার নেই যে রায় কবে কখন ঘোষণা করা হবে বলার। আদালত যখন মনে করবেন তখন মামলাটি আপিল বিভাগের কজলিস্ট (কার্য তালিকায়) আসবে্, কার্য তালিকায় আসলে আমরা সকলেই জানতে পারবো, রায় কবে হচ্ছে।

তিনি বলেন, যদি মন্ত্রী এমন দিন-ক্ষণ ঠিক করে দু’এক দিনের মধ্যে রায় হবে বলে থাকেন, তাহলে তিনি ঠিক করেননি। রেজিষ্ট্রার আরও বলেন, তিনি রাজনৈতিক বক্তৃতায় এসব বলতে পারেন না। রায়ের দিন ঠিক করলে রাষ্ট্র ও আসামি  উভয় পক্ষের আইনজীবীকে জানানো হবে।

রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়ক ও সরকারের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান বলেন, উনি রায়ের বিষয়ে কী জানেন? আমি ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে বলছি, সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি শেষ হয়েছে, তবে রায় কবে হবে সেটা সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের বিষয়। এ বিষয়ে কারও কোনো মন্তব্য করা ঠিক না। এমন কী মন্ত্রী যদি সাঈদীর রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করে থাকেন ঠিক করেননি।

জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। আমরা ট্রাইব্যুনালের রায় পর্যন্ত বলতে পারবো। আপিলে কী হচ্ছে সেটা বলতে পারবো না। আমি মনে করি, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় কমপক্ষে তিন সপ্তাহের আগে হতে পারে না। কারণ মামলাটি যেন তেন মামলা নয়। এছাড়া আপিলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে।

গত ১৫ এপ্রিল আপিল মামলার শুনানি শেষ হওয়ায় পর ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখার এ আদেশ দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ মার্চ সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপিল দাখিল করে। যেসব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল সে অভিযোগগুলোতে আপিলে দণ্ডের আর্জি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ১২টিতে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

প্রমাণিত ৮টি অভিযোগ হচ্ছে  ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ এবং ১৯নং অভিযোগ। এরমধ্যে ৮ এবং ১০ নং অভিযোগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ দুই অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা ও বিশাবালী হত্যার অভিযোগ। দুটি অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় প্রমাণিত অপর ছয় অভিযোগে সাজা প্রয়োজন নেই বলে ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ