বুধবার খালেদার মামলার চার্জ স্থগিত সংক্রান্ত আদেশ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদনের ওপর বুধবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রোববার তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানির পর এ দিন ধার্য করা হয়।
আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মাহাবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। অপরদিকে আবেদনের বিরোধীতা করে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন খোরশেদ আলম খান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বদরুদ্দোজা বাদলসহ বিএনপিপন্থী প্রায় শতাধিক আইনজীবী।
শুনানির পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা শুনানিতে বলেছি এই মামলায় একটি বিষয় হলো বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের বিচারক সঠিকভাবে অভিযোগ গঠন করেননি। তিনি অভিযোগ গঠন করার সময় অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। বিচারকের এজলাস থেকে নেমে গিয়ে অভিযোগ গঠন করেন। যেখানে মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হয়নি। এ ভাবে চার্জ গঠন একজন বিচার প্রার্থীর মৌলিক অধিকারের চেয়ে বেশি খর্ব করা হয়েছে। যেহেতু আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে সেহেতু হাইকোর্টে বিষয়টি শুনানি শেষ করেছেন। তাই আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ২৩ এপ্রিল বুধবার দিন ঠিক করেছেন। আমরা আগামীকাল নিম্ন আদালতে বেগম খালেদার পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করবো।
মওদুদ বলেন, চার্জ গঠন করে আদেশ দেওয়ার এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
এদিকে দুদকের আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিধি ও আইন অনুযায়ী হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার নজির উপস্থাপন করেছি। আমাদের দাবি হলো তাতে কোনো ধরনের ত্রুটি নেই।
গত ১৩ এপ্রিল নিম্ন আদালতের অভিযোগ গঠন ত্রুটিযুক্ত তাই তা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন হাইকোর্টে এই আবেদনটি করেন।
গত ১৯ মার্চ বুধবার মহানগর দায়রা জজ বিশেষ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন। আগামী কাল ২১ এপ্রিল এ মামলার সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
এজাহারে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানম নামে এক মহিলার কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। তবে জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে, যা কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়। এই টাকার বৈধ কোনো উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার জনকে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২৬টি ধার্য তারিখ পার হলেও আইনি মারপ্যাঁচে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ এ মামলায় খালেদা জিয়া গত বছরের ১১ অক্টোবর আদালতে হাজিরা দেন।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।