অপহরণ গুম আতংক সর্বত্র

kidnaping অপহরণসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বেলা’র প্রধান নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহরণ কারীদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার একদিন পর নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে অপহৃত হন বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবীর মিঠু। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মিঠুকে উদ্ধার করা যায়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত চার বছরে সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ গুম নিয়ে সারা দেশের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আতংক।
দেশের কোন না কোন অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন অপহরণের ঘটনা। অপহৃত হচ্ছে নিরাপরাধ মানুষ। অপহরণের পর আর কোন খোঁজ মিলাছে না তাদের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে একটু নড়েচড়ে উঠলেও কয়েকদিন পর আর এ নিয়ে থাকে না কোন তৎপরতা। অপহৃতদের স্বজনরা অশ্রুসিক্ত চোখে নির্ঘুম পথ চেয়ে বসে থাকেন। যেমনটি ছিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। যেমন আছেন ইলিয়াস আলীর বৃদ্ধা মাতা।
পুলিশ সদর দফতরের হিসেব অনুযায়ী গত চার বছরে সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। এর বেশিরভাগই ঘটেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। এছাড়া কখনো মুক্তিপণ আদায়, কখনো প্রতিশোধ নেয়া, আবার কখনো কখনো শায়েস্তা করতে ঘটেছে কিছু ঘটনা। অপহৃত ব্যক্তিদের তালিকায় রাজনৈতিক শীর্ষনেতা, ছাত্রনেতা, ব্যবসায়ী পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষও রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ উদ্ধার হলেও বেশির ভাগ ঘটনারই কিনারা হয়নি।
‘অপহরণ ও গুম’ নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, সংস্কৃতি কর্মী, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক, সবাই এখন আতংকিত। এবিসি নিউজ বিডি’র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন তাদের আতংকের কথা। ঘড়ের বাইরে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারবেন কিনা তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘অপহরণ ও গুম নিয়ে গোটা দেশে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আপনারাইতো দেখলেন, প্রধানমন্ত্রী বলায় সৈয়দা রেজওয়ান হাসানের স্বামী আবু বকরকে ছেড়ে দেওয়া হল। বকরের পরিববার তাই কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। জানি না সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী এর কি জবাব দেবেন। সাধারণ মানুষের আতংক কাটাতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
‘অপহরণ ও গুম’ নিয়ে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘অপহরণ-গুম নিয়ে আমরা চলচ্চিত্র বা সংস্কৃতিক কর্মীরা কি নিরাপদ? স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবো না, এজন্যই কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীন দেশে পরাধীন থাকতে হবে আমাদের। কাকে কখন তুলে নেওয়া হবে কেউই জানেন না। কার কখন কোথায় লাশ পরে থাকবে, কারোই তা জানা নেই। আমরা আতংকিত। এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। অপহরণ গুম বন্ধ হোক আমরা দল মত নির্বিশেষে তা চাই।’
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘অপহরণ-গুম বন্ধ করতে হলে আগে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে দেশ থেকে সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহেদ চৌধুরী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘অপহরণ-গুম বন্ধ হোক। রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এখন সময় এসেছে, একই টেবিলে বসে অপহরণ-গুম বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আতংক কাটাতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ