সরকারি অনুদান অস্বচ্ছ : টিআইবি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সাভারের রানা প্লাজা ভবর ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে ভবন ধসের পর ১০২টি পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ। অগ্রগ্রতি হয়েছে ৬০ শতাংশের আর ৯ শতাংশের এখনো ফলপ্রসূ হয়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘তৈরি পোষাক খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ: প্রতিশ্রুতি ও অগ্রগতি’ শীর্ষক ফলোআপ প্রতিবেদনের প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
এতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. শরীফ আহমদ চৌধুরী ও অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা।
সংবাদ সম্মেলনে সুশাসন বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগের সমন্বয় এবং তাদের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কার্যকরিতা নিশ্চিতকল্পে টিআইবি গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য একটি ‘তৈরি পোশাকখাত সুশাসন কর্তৃপক্ষ’গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন অংশীজনের প্রচেষ্টায় সমন্বয়হীনতার কারণে দৃশ্যমান ও সুস্পষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। সুশাসনের অব্যাহত চ্যালেঞ্জ এবং সব উদ্যোগের কার্যকর সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে সমীক্ষা প্রতিবেদনে বিভিন্ন সুপারিশ উত্থাপিত হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো: টিআইবি’র পূর্বতন গবেষণার সুপারিশ অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ গার্মেন্টস বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, ক্রেতা-মালিক অংশগ্রহণে স্থায়ী পোশাকপল্লী স্থাপন ত্বরান্বিতকরণ, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন, কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্ডার বাতিল, শ্রমিক ছাঁটাই এবং কারখানা বন্ধের ঝুঁকি নিরসনে ক্রেতা, মালিক ও সরকার কর্তৃক বিশেষ সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ।
টিআইবি জানিয়েছে, সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে শ্রমিকরা নিরাপত্তা এবং অধিকার বঞ্চনার শিকার হতে থাকবে। বায়ারদের পরিদর্শনে এ পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে বেকার হয়েছে ৫০ হাজার শ্রমিক। এভাবে চলতে থাকলে ৫ লাখ শ্রমিক চাকরি হারাবে। ৩০ বছরে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা দু-এক বছরে শেষ হবে না।
টিআইবি মনে করে, গৃহীত ইতিবাচক উদ্যোগসমূহ সুশাসনের প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ভিত্তি তৈরি করলেও, টেকসই পরিবর্তনের জন্য তা অপর্যাপ্ত। সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রস্তাবিত গার্মেন্টস পল্লীতে কলকারখানাগুলো সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। অনেকগুলো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা হতাশার জন্ম দিয়েছে। সরকার এবং ক্রেতাপক্ষ এবং তাদের ফোরাম কর্তৃক কারখানা পরিদর্শনে গতি খুবই শ্লথ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত মানের স্বচ্ছতা ছিল না। ক্রেতার প্রতিনিধিত্বকারী কিছু পরিদর্শকদের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থের বিষয়ে যথাযথ সমন্বয় জরুরি। শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদী ও মৌলিক স্বার্থের বিষয়ে সরকার ও মালিক পক্ষের আরো বেশি ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রানা প্লাজা ধসে শ্রমিকদের সহায়তার জন্য যে ফান্ড গঠন করা হয়েছে, তাতে কি পরিমাণ অনুদান এসেছে এবং কিভাবে বিতরণ করা হয়েছে। এব্যাপারে সরকারের স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।
গার্মেন্টস খাতের সুশাসনের সমস্যা বহুমাত্রিক এবং যোগসাজশমূলক দুর্নীতির ঘটনার ব্যাপকতার জন্য এসব সমস্যার সমাধানে প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল এবং সকল অংশীজন সেই সমস্যার মোকাবেলায় তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
ড. ইফতেখর বলেন, যদি ক্রেতাপক্ষ দায়িত্বশীল ও নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যবসা পরিচালনায় ব্যর্থ হন, তাহলে আরো হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারাবে।