হাইকোর্ট বেঞ্চ ধানমন্ডি মাঠের রিট শুনানিতে বিব্রত
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজধানীর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে অবৈধ স্থাপনা বন্ধে করা রিটের শুনানিতে বিব্রতবোধ করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। একই সঙ্গে মামলাটি আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ (আউট অব লিস্ট) করে দিয়েছেন।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি হাবিবুল গণির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানিতে কনিষ্ঠ বিচারপতি বিব্রত বোধ করেন। পরে মামলাটি আউট অফ লিস্ট করার জন্য বলেন। রিটকারীর আইনজীবী তখন তা কার্য তালিকা থেকে বাদ দেন।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ফিদা এম কামাল। শুনানিতে আদালত বলেন, এর আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরির দেওয়া রায়ে ঢাকা শহরের সকল মাঠ উন্মুক্ত করার আদেশ ছিল। বর্তমানে সেই রায়ের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে।
জবাবে ফিদা কামাল বলেন, আমরা আপনাদের কাছে সেই রায়ের কপি জমা দিয়েছি। আপনারা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে কোনো রুল দিবেন না, তাহলে শুনানি না করে খারিজ করে দেন।
আদালত বলেন, আমরা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা কি আপনি জানেন? আপনার কাছে কোনো বিষয়ে জানতে চাইতে তো পারি। যেহেতু এই বিষয়ে এর আগে রায় দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আপনারা বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন।
আইনজীবী বলেন, সেটা এক রকম ব্যাপার। আর ধানমন্ডি মাঠের বিষয়টি আরেকটি ব্যাপার। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বিচারপতি ও আইনজীবীর মাঝে কথা হয়। এরপর কনিষ্ঠ বিচারপতি এ মামলাটি শুনতে বিব্রত বোধ করছি মর্মে আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এ সময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার সারা হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান জানান, আদালতে এ মামলার শুনানিকালে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হওয়ায় বিচারপতি শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করে কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘কনিষ্ঠ বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছেন। অন্য কোন বেঞ্চে এ বিষয়ে আবার আবেদন করা হবে।’
এর আগে, ২১ এপ্রিল ধানমন্ডি মাঠের অবৈধ স্থাপনা বন্ধ ও মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ করার অনুমতি দিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়।
রিট আবেদনে এলজিআরডি সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন), এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনটি করেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ইকবাল হাবিব, ফারজানা শাহনাজ, মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, প্রফেসর ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ ও মোরশেদ চৌধুরী।
আবেদনে অবিলম্বে ধানমন্ডি মাঠে সব স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, রাজউকের পরিচালকের (প্রশাসন) প্রতি অন্তর্বর্তীকালীণ সময়ের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ধানমন্ডি মাঠে চলমান সব অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ, বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদে কেন স্থানীয় সরকার সচিব ও এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়।
পাশাপাশি বৃহত্তর পরিকল্পনার (মাস্টার প্লান) আলোকে উন্মুক্ত জায়গা হিসেবে ধানমন্ডি মাঠে সর্ব সাধারণের প্রবেশাধিকার ও ব্যবহার নিশ্চিতে এই দু্ই বিবাদীকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়।
এছাড়াও ৯ এপ্রিল ওই মাঠে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে রাজউকের পরিচালক প্রশাসনের দেওয়া চিঠির কার্যকারিতার ওপর স্থাগিতাদেশও চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে সারা হোসেন জানান, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ হাইকোর্ট এক রায়ে ধানমণ্ডি মাঠের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আদেশ দেন। কিন্তু শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্মকর্তারা আদালতের রায় পালন করেননি। পরে ২০১৩ সালের ২৭ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় অবমাননার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। কিন্তু কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছিলেন না ক্লাব কর্মকর্তারা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে সংগঠনগুলো মাঠের বন্ধ ফটক খুলে মাঠে প্রবেশ করে সমাবেশ করে। এরপর মাঠের ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন।
মামলায় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, সালমা এ সফি, কামরুন্নাহারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টের পূর্বের দেওয়া রায় বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এ রিটটি দায়ের করা হয়।