ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতা চায়
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মিডিয়াতে জানাজানি হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সরাসরি আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতা চেয়ে আবেদন করেছে। ট্রাইব্যুনাল আইন-(১৯৭৩) এমন একটি বিধানও সংশোধন করার প্রস্তাব জানানো হয়েছে আবেদনে। আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
২৪ এপ্রিল আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর একান্ত সচিবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. আব্দুল হান্নান খান এ আবেদন করেছেন বলে এবিসি নিউজ বিডিকে নিশ্চিত করেন তিনি।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আসামি গ্রেফতার করা না গেলে তার মালামাল জব্দ করার বিধান সংযুক্ত করার জন্যও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এবং ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, তদন্তের স্বার্থে আসামিকে সরাসরি গ্রেফতারের ক্ষমতা তদন্ত সংস্থাকে দেওয়া হোক।
আইন সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিকে গ্রেফতারের প্রয়োজন হলে প্রসিকিউশনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এ আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়ে যায়। এরপর ট্রাইব্যুনালে আবেদনের শুনানির পর গ্রেফতারের আদেশ দেওয়ার আগেই আসামি আত্মগোপনে বা পালিয়ে চলে যায়। পরে আসামিকে পলাতক রেখেই বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে বেশিরভাগ ব্যাক্তিরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।’
এটা তদন্ত সংস্থার সাফল্য দাবি করে সানাউল হক বলেন, ‘পলাতক আসামিরা এমনই দেশে অবস্থান করেন যে দেশে সরকার মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।’
তাই এসব আসামিদের গ্রেফতার করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্ত অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনের যেমন আসামিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা রয়েছে, তেমনি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছেও আসামিকে গ্রেফতারের সে ক্ষমতা থাকা উচিৎ বলে মনে করেন সানাউল হক।
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান খান স্বাক্ষারিত আবেদনটিতে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এখন পর্যন্ত ১৯টি মামলার তদন্তকাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। যার মধ্যে চারটি মামলা আসামির অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে।
আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কয়েক দিন আগেই ‘রহস্যজনকভাবে’ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, আরেক আসামি জাহিদ হোসেন খোকনও দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তার অনুপস্থিতিতে মামলাটির কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে। এভাবে আসামিরা যাতে পালিয়ে না যেতে পারে সেজন্য আইনের সংশোধন করে তদন্ত সংস্থাকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া উচিত।
আবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০ সালের ১৫ জুলাই প্রণীত ট্রাইব্যুনাল আইনের ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনে প্রসিকিউটরের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করতে পারেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন মনে করলে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
প্রসিকিউশন অথবা তদন্ত সংস্থাকে এমন আবেদন করার পর ট্রাইব্যুনাল চলাকালে তা শুনানি করতে হয় উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, ততক্ষণে অভিযুক্ত বা অভিযুক্ত পক্ষ স্বাভাবিকভাবেই সতর্ক হয়ে যায় এবং পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বতর্মান বিধানটি সংশোধন করে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ক্ষমতা যদি তদন্ত কর্মকর্তাকে দেওয়া না হয় তবে ভবিষ্যতে হয়তো কোনো আসামিকেই আর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা যাবে না। এমনকি সব মামলা আসামির অনুপস্থিতিতেই সম্পন্ন করতে হতে পারে।
সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ ধারাটির সংশোধনী এবং আন্তর্জাতিক আপরাধ আইন-১৯৭৩ এর ৮ (২) ধারার পর একটি উপ-ধারা যুক্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে।