রামুর তদন্ত রিপোর্ট লাল ফিতায় বন্দি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধবিহারে হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে লাল ফিতায় বন্দি। রিপোর্ট জমা দেওয়ার ৬ মাসেও জানা যায়নি প্রকৃত দোষীদের নাম। ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে কি সুপারিশ করা হয়েছে তাও আলোর মুখ দেখেনি। দেশে-বিদেশে সমালোচিত চাঞ্চল্যকর এ বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষের চলছে লুকোচুরি।
ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননাকর ছবি ট্যাগ করার অভিযোগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে কক্সবাজারের রামু’র বৌদ্ধ বিহারে হামলা, তাদের বসতিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পরদিন একই জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় নতুন করে বৌদ্ধদের বসত-বাড়িতে হামলা হয়। দু’দিনের এ হামলায় রামু উপজেলার ১১টি বৌদ্ধ মন্দির, ২০টি বাড়ি ও দোকানে হামলার পর পুড়িয়ে দেয়া হয়। হামলাকারীরা লুটপাট চালায় আরও অর্ধশতাধিক বাড়ি ও দোকানে।
এর পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চট্রগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বান্দরবানের পুলিশ সুপার কামরুল হাসান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুর রউফ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার।
গত বছরের ১০ অক্টোবর এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পর ১৮ অক্টোবর দুপুরে কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার নুরুল ইসলাম নিজে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের দফতরে প্রতিবেদনটি জমা দেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সি কিউ কে মুস্তাক আহমদ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর (১৮ অক্টোবর-২৩ এপ্রিল) ইতিমধ্যে ৬ মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যেও জানা যায়নি রামু’র হামলার প্রকৃত আসামিদের নাম। জানা যায়নি কারা বা কোন গোষ্ঠি এই হমলার মূল রুপকার। সরকারের পক্ষ থেকে সে সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘটনার জন্য দেশী-বিদেশি গোষ্ঠিকে দায়ি করেন। বিদেশি গোষ্ঠি কারা এ হামলায় মদদ জুগিয়েছে তাও তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়নি। মূল আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে কি না তাও থেকে গেছে অন্ধকারে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে কি সুপারিশ করা হয়েছে, কবে নাগাদ এই সুপারিশ আলোর মুখ দেখবে তা কারোই জানা নেই। বিশ্ব মিডিয়াসহ দেশে-বিদেশে সমালোচিত রামু’র চাঞ্চল্যকর এই হামলার বিষয় নিয়ে সরকার পক্ষের চলছে লুকোচুরি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব সি.কিউ.কে মুস্তাক বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাঈনুদ্দিন খন্দকার এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে ফাইল বন্দি তা ঠিক নয়। অপরাধিদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারে এখনও অভিযান অব্যাহত আছে। তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়নে স্থবিরতার কথা স্বীকার করেন তিনি। কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখবে বা দেশী-বিদেশি কোন গোষ্ঠি এ হামলায় ইন্ধন দিয়েছে তা প্রকাশিত হবে, সে সম্পর্কে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।