প্রয়োজনে র্যাব-১১’র সকলকে প্রত্যাহার : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারায়নগঞ্জে অপহরণের পর প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে হত্যা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির বিষয়ে প্রয়োজনে র্যাব-১১’র সকলকে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নৌ-পথের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুস্তাকসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, এ অবস্থায় র্যাবের প্রত্যেককে প্রত্যাহার করা হবে কিনা’ এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না। আপনারা জানেন, র্যাব-১১’র অধিনায়ককে (সিও) প্রত্যাহার করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। প্রয়োজনের র্যাব-১১’র সবাইকে প্রত্যাহার করা হবে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, আপনারা যেভাবে চিন্তা করছেন, প্রধানমন্ত্রীও সেভাবেই চিন্তা করেছেন। আইনের মাধ্য দিয়েই ব্যবস্থা নেওয় হবে।
‘অপহরণ ও লাশ উদ্ধারের সাত দিন পর কেনো মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাসায় তল্লাসী’ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতোদিন নুর হোসেনের বাড়ির উপর পুলিশের কড়া নজরদারী ছিলো। আত্মীয়-স্বজন, ফলোয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কারা আসছে তা জানার জন্য।
‘কড়া নজরদারির মধ্যেও নুর হোসেন পালিয়ে গেলো কিভাবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নজরদারীর মধ্যেই নুর হোসেন পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, মামলা যখন হয়েছে তখন সে জানতে পেরেছে। কেউ যদি আত্মগোপন করতে চায়, তাহলেতো সে পালিয়ে যাবেই।
‘সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন কিনা’ জানাতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনার যেভাবে বলছেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ততোটা খারাপ নয়। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি বলবো, সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমি বা সরকার উদ্বিগ্ন না।
গত ২৭ এপ্রিল (রোববার) ঢাকা নারায়নগঞ্জ লিংক রোড থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নাসিকের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও এাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাতজনকে আলাদাভাবে অপহরণ করা হয়। এর পর পরই নজরুল ইসলামের পরিবার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্ত্রাসী নুর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল (বুধবার) নারায়নগঞ্জের শীতালক্ষা নদী থেকে অপহৃত ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ৭ দিন পর গতকাল ৩ মে প্রথম মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নিহতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের কে›ন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ অপহৃত হন গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও গাড়ি চালক ইব্রাহিম।।
অপহরণের পর হত্যার এই ঘটনায় র্যাব-১১’র বিরুদ্ধে সহায়তা করার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এমন অভিযোগ উত্থাপন করেন। শনিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, র্যাব-১১’র সহায়তায়ই নজরুলসহ পাঁচ জনকে তুলে নেওয়া হয়। র্যাবের সহায়তা ছাড়া এমন অপহরণ সম্ভব নয়।’ র্যাব-১১’র কার্যালয়ে অপহৃত সাত জনকে রাখা হয় বলেও ধারণা করছেন তারা।
সেলিনা ইসলাম আরো বলেন, ‘নারায়নগঞ্জ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ন শহর। এখানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পরেও র্যাব-১১ ও পুলিশের কোন ভুমিকাই ছিল না। তারা সক্রিয় হলে আমার স্বামীসহ সাতজনকে এভাবে প্রান দিতে হত না।’