এরশাদই জিয়া ও মঞ্জুরের খুনী : খালেদা জিয়া
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডে এরশাদ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করার হুঁশিয়ারি দেন।
গুম-খুন ও অপহরণের প্রতিবাদ এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ও মঞ্জুর খুনী এরশাদ। এর বিচার হবে।
‘সারাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে’ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, আজ সারাদেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭ জনের হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারাদেশ আজ হাহাকার করছে। চারদিকে মানুষের কান্না আর আহাজারি। কেউ কারো কথা শুনছে না।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বিভিন্নলীগ সারাদেশে জুলুম অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছে। গুম খুনের সঙ্গে এরা জড়িত। এ অবৈধ সরকার তাদের নিরস্ত্র করতে পারছে না।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গুম-খুনের বিরুদ্ধে আজ নারায়ণগঞ্জে হরতাল হয়েছে। আমরা এই সরকারের কাছে জানতে চাই কারা এটা করছে। এই যে খুন করে নদীতে লাশ ফেলা হলো, কয়েকদিন পর নদীতে তাদের লাশ ভেসে উঠল।
সরকারের কাছে তিনি জানতে চান, কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের কেন ধরা হয়নি। কারণ, এরা সরকারদলীয় লোকজন। আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন কোথায় মানুষ জানতে চায়। কেন সাত দিন পর তার বাড়িতে তল্লাশী করা হলো।
বেগম জিয়া বলেন, ‘এটা শুধু নারায়ণগঞ্জেই ঘটছে না, গুম-খুনের পর রাজশাহী, চাঁদপুর, বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরে, নীলফামারিতে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। সারাদেশ আজকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে মানুষ খুন করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের হাতে শুধু রক্ত আর রক্ত। খুনি সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন রক্ত আর থামবে না।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে এক হতে হবে, নইলে এই খুনি সরকারের হাত থেকে কেউ রেহাই পাবেন না।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না। তার আগে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি তারা কী করে জনপ্রতিনিধি হয়। ১৫৩ জন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় নাই, তারা আবার জনপ্রতিনিধি।
তিনি বলেন, ‘কোনো মানুষ কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারে না। সুশীল সমাজকেও গুম-খুনের বিরুদ্ধে সমাবেশ করতে দেয়নি। ব্যানার কেড়ে নিয়েছে। ভাগ্য ভালো তাদের গায়ে হাত দেয়নি। তাদের এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। তারা শুধু খুন করতেই জানে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে উদ্দেশ্য করে বেগম জিয়া বলেন, ‘এরশাদ জিয়া ও মঞ্জুরের খুনি। তার বিচার করতে হবে। এই খুনীকে আবার প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা বানিয়েছেন। খুনীদের নিয়ে চলা যায় না। তাকে নিয়ে গাট বেঁধেছেন। এই খুনির বিচার হবে।
বিএনপি খুন ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুবলীগের নেতারা জঙ্গি ছিনতাই করেছে। কাজেই আওয়ামী লীগ জঙ্গি ও গুমের সঙ্গে জড়িত। শায়েখ আব্দুর রহমান মির্জা আযমের আত্মীয় এটা সবাই জানে।
প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের জলকামান আর সাজোয়া জানের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়াপারসন বলেন, ‘বিরোধী দলের কর্মসূচিতে কামান-টামান চলবে না। এসব ওয়াটার কামান একদিন জনগণের সঙ্গে একাকার হয়ে অন্যদিকে ঘুরে যাবে। গুলি করে জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায় না। কারণ, তারা জানে শান্তিপূর্ণ নিবার্চন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। তারা জনগণ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণ আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘চামচারা যতই নাচানাচি করে বলুক, তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে, কিন্তু সে স্বপ্ন ভুলে যান। এরা কখনও কোনো ভোটে জিতেনি এরা এখন নৌকায়ে উঠে বিনা ভোটে সরকারের মন্ত্রী হয়েছে।
প্রধানন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবেন আর অন্য দেশের গোলামী করবেন। আপনারা তো দাস নন। আপনারা হলেন কৃতদাস। এজন্য আপনাদের প্রভুদের কথা বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের ও জনগণের অনেক ক্ষতি করেছেন আর করবেন না। দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশের মানুষকে রক্ষা করুন। অন্যথায় এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’
এর আগে, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় বেগম খালেদা জিয়া গণঅনশন মঞ্চে উপস্থিত হন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ তৃণমলের নেতাকর্মীদের নামে ‘মিথ্যা মামলা’ ও সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনসহ সরকারের নানা নির্যাতন ও নিপীড়ণের প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দলটি।
ঢাকায় গণঅনশন কর্মসূচি পালনে কোনো স্থানে অনুমতি না পাওয়ায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের শেষে প্রেসক্লাবের সব কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান গণঅনশনে প্রেসক্লাবের জায়গা ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য।
গণঅনশন মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মাওলানা ইছহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতিক), ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, লে. জে (অব.) মাহাবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, ড. ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, সা্বেক এমপি শাম্মী আকতার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম ওবায়দুল হক নাসির প্রমুখ।