শান্ত্বনা খুঁজছে সরকার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একের পর এক গুম খুন অপহরণে ভেঙ্গে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এই ইস্যুতে দানা বাঁধতে পারে বিরোধী দলগুলোর সরকার পতনের আন্দোলন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে পারে সরকার। ঘরে-বাইরে চাপের কারণে উৎকন্ঠায় রয়েছে সরকার। এসবের মাঝেও শান্ত্বনা খুঁজছে তারা। তবে পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক সেখান থেকে পরিত্রাণ পাবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা।
গত ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই গুম খুন ইস্যুতে নতুন করে চাপের মুখে পড়ে সরকার। গত কয়েকদিনের গুম খুনে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ইস্যু বানিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করছে বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়ে দেশব্যাপী গণঅনশন কর্মসুচি পালন করেছে দলটি। জনসমর্থনও পাচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাজনীতির মাঠে সরকারকে ঘায়েল করা বিএনপির জন্য সহজ হবে।
তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নানামুখি সিদ্ধান্ত নিযেছে সরকার। এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টিও সরকার চিন্তা ভাবনা করছে। নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, ‘যে কোনো মুল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে সরকারকে। জনমনে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে তা দূর করে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘প্রক্সি দিয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলে না। ব্যাক্তিত্ববান ও আইন সম্পর্কে ধারণা আছে এমন একজনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে।’
সূত্রমতে, সরকার চাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের বড় ইস্যু হয়ে ওঠার আগেই অতীতের মতো ধামাচাপা পড়ে যাক। আপাতত কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জনরোষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকার নিস্কৃতি পাবে না তা নিয়েও ভাবছে দলের নীতি নির্ধারণী মহল।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুব খারাপ নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গুম খুন অপহরণ বর্তমানের চেয়ে বেশী ঘটেছে। বর্তমান অবস্থার জন্য বিএনপি-জামায়াতের দায়ও কম নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলেও জনগণ হতাশ না হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। সভা সমাবেশে ও প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের মাঝে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
এক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার চোরাগুপ্তা হামলার ঘোষণা ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে অপহরণ ও খুনের ঘটনাকে উৎসাহিত করে জামায়াতের উস্কানিকে জনসম্মখে তুলতে ধরতে পারলে সরকারের ব্যপারে জনমনে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে বলে মনে করেন দলের সিনিয়র নেতারা।
আবার বিএনপি সরকারের সময় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন খুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা, এমপি আহসানউল্লাহ মাস্টার, অর্থমন্ত্রী শাহএসএমএম কিবরিয়াসহ অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যার ঘটনা জাতির কাছে তুলে ধরতে পারলে জনগণ বিএনপিকে ঘৃণা করবে। বিএনপির কথায় তারা সরকারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেবে না বলেও মনে করেন তারা।
দেশব্যাপী চলমান অপহরণ-গুম-খুন, সন্ত্রাস বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান ফল দেবে বলে মনে করে সরকার। এজন্য যে কোনো সময় এ অভিযান শুরু হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সোমবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের এক মন্ত্রী জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এই বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গুম, খুন ও অপহরণ নিয়ে জনমনে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে তা নিরসন হবে। জনগণের মাঝে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। সরকারের হারানো সুনাম পুনরুদ্ধার হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানের সময়ের চেয়েও খারাপ ছিল। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় বিএনপি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইলেও পারবে না। সরকার তার দুরদর্শিতা দিয়ে অতীতের মতোই জনগণের আস্থা অর্জন করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হবে।’