সরকারের প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করার সৎসাহস নেই
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সাত খুনের ঘটনায় প্রকৃত দায়ীদের সনাক্ত করার সৎসাহস সরকারের নেই। কারণ, বর্তমান সরকার জনগণের সমর্থনবিহীন অবৈধ একটি সরকার। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করে টিকে আছে। তাই তাদের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই।
তিনি বলেন, আইনজীবী সমাজ আইনের শাসন ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। অবিলম্বে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে আইনজীবীরা জনসমর্থনবিহীন অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাবে।
খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আপনার বিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হবে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত আইনজীবীদের এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে গুমের পর হত্যা এবং সারা দেশে চলমান হত্যা, গুম ও অপহরণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে এ মানববন্ধন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে মিছিল করেন আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট বার আয়োজিত এ মানবন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির নেতারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির শেখ আখতারুল ইসলাম, মন্টু ঘোষ ও সুব্রত চৌধুরী, বারের সাবেক সহসম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, সাইফুর রহমান ও রফিকুল হক তালুকদার, রবিউল ইসলাম রবি, তাজুল ইসলাম, মির্জা আল মাহমুদ, শরীফ ইউ আহমেদ, গোলাম নবী প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের পরিচালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ও বারের সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদি। বর্তমান সহসভাপতি ড. মেহেদি, আইনজীবী জামিল আখতার এলাহি, আখতারুজ্জামান, ড. আরিফা জেসমিন নাহিন, মোহাম্মদ আলী, রেজাউল করিম, রাগীব রউফ চৌধুরী, আইয়ূব আলী আশ্রাফী, মজিবর রহমান, নাসরিন খন্দকার শিল্পী, মাসুদ রানা, জুলফিকার আলী প্রমুখ।
মানববন্ধনে খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশে এ কর্মসূচি চলছে। আমাদের কর্মসূচিতে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি যোগ দিয়েছে, আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা এসেছেন। আইনজীবীরা যে ঐক্যবদ্ধ এটাই তার প্রমাণ। আমরা আইনজীবী, আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। আজ মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। কারণ, জনগণের সমর্থনবিহীন এই সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই।
তিনি বলেন, আমরা আইনজীবী সমিতি থেকে, বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ও আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছিলাম- অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র বিচারক দ্বারা একটি কমিশিন গঠন করে সত্যিকার অর্থে দোষীদের সনাক্ত করা হোক। কিন্তু তা করা হয়নি। কারণ, এই সৎ সাহস সরকারের নাই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা সরকারের নাই। এই অবস্থা বেশি দিন চলতে পারে না। আইনজীবী সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে এই জনসমর্থনবিহীন অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সাতজন অপহরণের পর সাতদিন আপনি নীরব ছিলেন। নজরুল ইসলামের শ্বশুর সংবাদ সম্মেলন করে নাম বলে দিয়েছেন- কারা টাকা নিয়ে তাদের হত্যা করেছে। কোন ব্যাংক একাউন্টে র্যাব কমান্ডোরের টাকা জমা হয়েছে, কারা টাকা জমা করেছে তাদের নামও বলে দেয়া হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত আপনি র্যাবের সেই কমান্ডিং অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
খোকন বলেন, কারণ, সে আপনার একজন মন্ত্রীর মেয়ের জামাই, সরকারের জামাই, আপনার সরাকারের আত্মীয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের গ্রেফতারে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। গ্রেফতার না করলে আইনজীবীরা আইনের শাসনের জন্য কঠোর কর্মসূচি দেবে।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পর সরকার বলেছিল- কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজপথ থেকে সাতজন মানুষকে অপহরণ করে হত্যা করা হলো। এখন সরকার কি বলবে? দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে সম্পূণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই।
তিনি বলেন, আর কত মাযের কোল, বোনের ভাই, স্বামী হারা স্ত্রীর পিতা হারা পুত্রের এবং পুত্র হারা পিতার আহাজারি শুনলে সরকারের নাটক বন্ধ হবে। এইসব নাটক বন্ধ করে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান তিনি।