আইনজীবীরা র্যাব-১১ কার্যালয় ঘেরাও করবেন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জের (নাসিক) প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত জনকে হত্যার ঘটনা তদন্তে অগ্রগতি দেখা না গেলে আগামী রবিবার র্যাব-১১ কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন জেলার আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা বার ভবনের সামনে এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন খান।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিকী অনশন হবে। সেই কর্মসূচিতে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় আইনজীবী নেতারা সংহতি প্রকাশ করবেন।’
অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে প্রত্যাহারকৃত ডিসি, এসপি ও র্যাবের সিও এর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, যেদিন অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার নিখোঁজ হন সেদিন আমরা র্যাবের কাছে গেলেও তারা পাত্তা দেয়নি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, আবদুর রশিদ, আবদুল বারী ভূঁইয়া প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল আদালতপাড়া থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কালো ব্যাচ ধারণ করে কর্মবিরতি পালন ও সমাবেশ করেন আইনজীবীরা।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহরণ হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার চার সহযোগী। একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহরণ হন আইনজীবী চন্দন সরকার।
তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
এ অপহরণ ও হত্যার জন্য র্যাবকে দায়ী করেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।
রোববার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন অর্থ দিয়ে র্যাবের মাধ্যমে তার জামাতাকে হত্যা করিয়েছেন।’
নজরুল পরিবার প্রথমেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের দিকে অভিযোগ তুলেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামিও করেছিলেন তাকে।
এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়া নূর হোসেনের কার্যালয় ক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেওয়ার পর শনিবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি গাড়ি জব্দ এবং ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. ইয়াসিনও জড়িত বলে দাবি করেন শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন ও ইয়াসিন মিয়াসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাব নজরুলসহ সাত জনকে খুন করেছে। ২৭ এপ্রিল নজরুলসহ সাতজনকে দুটি গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বালু শ্রমিকরা তাদের জানিয়েছে, র্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সেখানে ছিল।’
এ ঘটনা আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে জানানো হলে তার পরামর্শে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১ এর অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে জানান শহীদুল।
তিনি বলেন, ‘সিও (কমান্ডিং অফিসার) আমাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন।’
এরপর র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়কসহ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ফতুল্লা থানায় গেলে নারায়ণগঞ্জের এসপি ও ফতুল্লা থানার ওসি তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেননি বলে জানান শহীদুল ইসলাম।