র্যাবের ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাব-১১-এর তিন কর্মকর্তা অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ এবং লে. রানাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে আরো বলেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী প্রধানকে ডেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর নির্বাহী আদেশে সেনাবাহিনী এই ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে এই সেনা কর্মকর্তারা আপাতত তাদের বর্তমান বাসায়ই থাকতে পারবেন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এ তিনজনসহ সব অভিযুক্তকেই ফৌজদারি আইনে আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।
তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদেরকে আগাম অবসরে পাঠানো হয়েছে (প্রি-ম্যাচিউরড রিটায়ারমেন্ট)।
ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবের সহযোগীতায় সাত হত্যাকাণ্ড গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমে স্বজনদের অভিযোগ এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত যে কেউ, এমনকি কোনো মন্ত্রীর জামাতা হলেও রেহাই নেই বলে ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই লে. কর্নেল তারেকসহ তিন সেনা কর্মকর্তার ব্যাপারে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো।
লে. কর্নেল তারেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর জামাতা।
এদিকে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে বলেছেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে র্যাবের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। হাইকোর্টও এক স্বপ্রণোদিত নির্দেশে সাত হত্যাকাণ্ডে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। লে. কর্নেল তারেক সাঈদসহ কয়েকজন র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও র্যাব-১১-এর সিওসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এবং র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনীতে ফেরত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতজনকে খুনের ঘটনায় র্যাব-১১-এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর সোমবার র্যাব সদর দফতর চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান হলেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আফতাব উদ্দিন আহমেদ।
সেনাবাহিনী থেকে অভিযুক্ত তিন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও র্যাবের তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করবে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন।
র্যাবের তদন্ত কমিটি ছাড়াও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিন মন্ত্রণালয় থেকে ছয়জন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে আরও একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় র্যাবের কয়েকজন অসৎ সদস্যের হাত ছিল। র্যাব নজরুলসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এ জন্য র্যাব-১১-এর সিও এবং দু’জন মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তা মিলে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন।
শহীদুল ইসলামের অভিযোগ, র্যাব-১১-এর তৎকালীন তিন কর্মকর্তা অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ এবং লে. রানা ছয় কোটি টাকার চুক্তিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
মঙ্গলবার দিনে এবিসি নিউজ বিডির সঙ্গে আলাপকালে র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নির্দোষ, আমার অপরাধ আমি বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রীর জামাই। গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে, আমি তা নই।
উল্লেখ্য, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহরণ হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার চার সহযোগী। একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহরণ হন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে।বর্তমানে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি নারায়ণগঞ্জ পুলিশের কাছ থেকে গত রোববার ঢাকা মেট্রোপলিট্রন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।