প্রশাসন ওসমান পরিবারের আজ্ঞাবহ: আইভি

aivi আইভিসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, নারায়ণগঞ্জঃ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালনের মাধ্যমে ওসমান পরিবারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি।

তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমান এবং তার সদ্যপ্রয়াত ভাই সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অবাধ ও স্বাধীনভাবে নারায়ণগঞ্জকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একটি অংশ এখন মাদক ব্যবসাসহ নানারকম অসামাজিক কার্যকলাপের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে পুরো নারায়ণগঞ্জে এখন কোনো বাধা ছাড়াই বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

শুক্রবার এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি।

আইভি বলেন, ‘যারা অপরাধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, প্রকৃতপক্ষে তারা কোনো রাজনৈতিক দলেরই নেতাকর্মী নন। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য তারা রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার ক্ষমতা ব্যবহার করেন মাত্র। অপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন প্রথমে তাদেরকে সনাক্ত করে আইনি প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে কিংবা বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার করা যাবে না।’

‘হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও হত্যার ঘটনা এত বেড়ে গেলো কেন’ এমন এক প্রশ্নের জবাবে ২০১২ সালে আলোচিত ত্বকী হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অতীতে নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। কোনো তদন্ত হয়নি, আসল অপরাধীদের কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে চলেছি। যারা শহরে এই অপরাধী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এর কোনো ফলই আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।’

নজরুল ইসলাম অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘নিহত নজরুল এবং তার হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত আসামি দু’জনই শামীম ওসমানের লোক ছিলেন। অথচ নূর হোসেস ও নজরুল দু’জনেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে শামীম ওসমান চেষ্টা চালিয়ে গেছেন নাজমা রহমান এবং এসএম আকরামের মতো আওয়ামী লীগের অন্যান্য জনপ্রিয় নেতাদের সরিয়ে ফেলার।’

তিনি নিজেও তেমনি একজন জনপ্রিয় নেতা যার ওপর শামীম ওসমানের অব্যাহত চাপ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ার উদাহরণ টেনে আইভী বলেন, ‘প্রশাসন আমাকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করেনি। শহরের সবগুলো ফুটপাত দখল করে নিয়েছেন হকাররা, আর ফুটপাতগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ফুটপাতগুলো পুনরুদ্ধার না করার জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশ রয়েছে শামীম ওসমানের। একই কারণে আগের জেলা প্রশাসকের কাছ থেকেও আমি কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি।’

নাসিক মেয়র আরও বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে একটু একটু করে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়তে বাড়তে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। প্রথমে নাসিম ওসমানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে জাকির খানের মতো অপরাধী জন্ম নিল, তারপর ডেভিডের মতো অপরাধীদেরও উত্থান ঘটল। এই জাকির এবং ডেভিডের দু’জনই পরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এই অপরাধীদের যারা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তারা একই পরিবারের সদস্য। কিন্তু পরবর্তীতে দল বদল করার কারণে ‘টাওয়ার’ সেলিম, সুইট, জাকির, ডেভিডের মতো এই অপরাধীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’র মাধ্যমে হত্যা করা হয়।’

উল্লেখ্য, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন।

এরপর ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে মামলায় আসামি করা হয় মোট ১২ জনকে।

৩০ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয় জনের এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সবারই হাত-পা বাঁধা ছিল। পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইট ভর্তি দুটি করে বস্তায় বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ৩ মে নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার এবং রক্তমাখা মাইক্রোবাস জব্দ করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে ভিকটিম প্যানেল মেয়র নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে। তাদের বিরুদ্ধে ছয় কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে নজরুলসহ বাকিদের হত্যা করার অভিযোগ উঠে।

এ ঘটনায় র‌্যাব-১১’র পরিচালক তারেক, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানাকে চাকুরিচূত্য করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের আদালতের মুখোমুখি করা হবে।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশসহ সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা পুলিশে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাষক মনোজকান্তি বড়াল ও পুলিশ সুপার নুরুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ