৭ খুনে আমার কেউ জড়িত না: মায়া
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারায়ণগঞ্জে্ সম্প্রতি সংগঠিত নজরুল ইসলামসহ সাত হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে নিজের পরিবারের সদস্যের কখনোই কোনো যোগাযোগ, ব্যবসায়িক লেনদেন কিংবা সম্পর্ক ছিল না বলে দাবি করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে রাখতে চাই, এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে আমার পরিবারের কোনো সদস্যের কখনোই কোনো রকম যোগাযোগ বা ব্যবসায়িক লেনদেন বা সম্পর্ক ছিল না।’
শুক্রবার বিকেলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্যাডে তার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। এটি আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। আমার পরিবারের সম্মানহানি করেছে।’
মায়া বলেন, ‘এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এ তদন্ত কাজ যেন কোনভাবেই প্রভাবিত না হয় সেজন্য আমি কোনো রকম মন্তব্য করা থেকে বিরত আছি।’
তদন্তে নিশ্চয়ই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের মতো আমিও প্রকৃত অপরাধীদের আইনানুগ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।’
এ সময় কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যায় শোক প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহরণ হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার চার সহযোগী। একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহরণ হন আইনজীবী চন্দন সরকার।
তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
এ অপহরণ ও হত্যার জন্য র্যাবকে দায়ী করেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন অর্থ দিয়ে র্যাবের মাধ্যমে তার জামাতাকে হত্যা করিয়েছেন।’
নজরুল পরিবার প্রথমেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের দিকে অভিযোগ তুলেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামিও করেছিলেন তাকে।
এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়া নূর হোসেনের কার্যালয় ক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেওয়ার পর শনিবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি গাড়ি জব্দ এবং ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. ইয়াসিনও জড়িত বলে দাবি করেন শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন ও ইয়াসিন মিয়াসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাব নজরুলসহ সাত জনকে খুন করেছে। ২৭ এপ্রিল নজরুলসহ সাতজনকে দুটি গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বালু শ্রমিকরা তাদের জানিয়েছে, র্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সেখানে ছিল।’
এ ঘটনা আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে জানানো হলে তার পরামর্শে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১ এর অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে জানান শহীদুল।
তিনি বলেন, ‘সিও (কমান্ডিং অফিসার) আমাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন।’
এরপর র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়কসহ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ফতুল্লা থানায় গেলে নারায়ণগঞ্জের এসপি ও ফতুল্লা থানার ওসি তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেননি বলে জানান শহীদুল ইসলাম।
এ ঘটনায় র্যাব-১১’র পরিচালক তারেক, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানাকে চাকুরিচূত্য করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের আদালতের মুখোমুখি করা হবে।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশসহ সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা পুলিশে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাষক মনোজকান্তি বড়াল ও পুলিশ সুপার নুরুল ইসলামকে বদলি করা হয়।