ক্রসফায়ার দিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা হতে পারে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, নারায়ণগঞ্জঃ আলোচিত সাত খুনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে চাই, ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচার চাই। অন্য কোনোভাবেই গোঁজামিলের তদন্ত বা গ্রেপ্তার তারা চাই না। কিন্তু নূর হোসেনকে ক্রসফায়ারে দিলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে।’
শুক্রবার সিদ্ধিরগঞ্জে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় প্রকৃত খুনিদের ধরার স্বার্থে নূর হোসেনকে ‘ক্রসফায়ারে’ না দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘নূর হোসেন গ্রেফতার না হওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন। নূর হোসেনকে গ্রেফতার করা হলে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডে কীভাবে ঘটেছে তার পুরোটা জানা যাবে। এ কারণে নূর হোসেনকে দ্রুত গ্রেফতার করা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘সাত খুনের পর র্যাব বড় ধরনের দুর্নামের মধ্যে আছে। দুর্নাম ঘোচানোর জন্য তারাও ঘটনা ভিন্ন দিকে ঠেলে দিতে পারে।’
যেকোনো মূল্যে খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে নিহত নজরুলের ছোট ভাই আবদুস সালাম বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবিলম্বে র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কাউকে ক্রসফায়ারে ফেলে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তা মেনে নেব না। জাতির সামনে খুনিদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।’
প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, অপহরণ ও হত্যার জন্য র্যাবকে দায়ী করেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন অর্থ দিয়ে র্যাবের মাধ্যমে তার জামাতাকে হত্যা করিয়েছেন।’
নজরুল পরিবার প্রথমেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের দিকে অভিযোগ তুলেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামিও করেছিলেন তাকে।
এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়া নূর হোসেনের কার্যালয় ক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেওয়ার পর শনিবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি গাড়ি জব্দ এবং ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. ইয়াসিনও জড়িত বলে দাবি করেন শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন ও ইয়াসিন মিয়াসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাব নজরুলসহ সাত জনকে খুন করেছে। ২৭ এপ্রিল নজরুলসহ সাতজনকে দুটি গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বালু শ্রমিকরা তাদের জানিয়েছে, র্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সেখানে ছিল।’
এ ঘটনা আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে জানানো হলে তার পরামর্শে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১ এর অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে জানান শহীদুল।
তিনি বলেন, ‘সিও (কমান্ডিং অফিসার) আমাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন।’
এরপর র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়কসহ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ফতুল্লা থানায় গেলে নারায়ণগঞ্জের এসপি ও ফতুল্লা থানার ওসি তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেননি বলে জানান শহীদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহরণ হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার চার সহযোগী। একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহরণ হন আইনজীবী চন্দন সরকার।
তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
এ ঘটনায় টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠলে র্যাব-১১’র পরিচালক তারেক, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানাকে চাকুরিচূত্য করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের আদালতের মুখোমুখি করা হবে।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশসহ সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা পুলিশে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাষক মনোজকান্তি বড়াল ও পুলিশ সুপার নুরুল ইসলামকে বদলি করা হয়।