তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় মমতাকে দূষলেন প্রধানমন্ত্রী

sheikh hasina shekh শেখ হাসিনাসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি দূষলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও শেষ মুহুর্তে মমতার ব্যানার্জির আপত্তির জন্য তিস্তা চুক্তি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময়েই এই চুক্তিটি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

এরপর এই চুক্তির ব্যাপারে নানা সময়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে আসলেও রোববারই সরাসরি মমতাকে দায়ী করে বক্তব্য দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে শুরুতেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিস্তা নদী নিয়ে আমরা (বাংলাদেশ-ভারত) আলোচনা করে একটা সমঝোতায় এসেছিলাম।

“কিন্তু, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, ভারতের এক প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আপত্তি করলেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা দেখি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আন্তরিক ছিল।”

এই চুক্তির ব্যাপারে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আশা করি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারবো।”

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা থাকলেও শেষ মুর্হর্তে তিনি বেঁকে বসেন, আটকে যায় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি।

এরপর বিভিন্ন সময়ে চুক্তি স্বাক্ষরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারে পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এ চুক্তি।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে গঙ্গা ব্যারেজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যৌথ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কারণে প্রয়োজন যে, এটা তো ওপর থেকে আসবে। সেজন্য, সে দেশগুলোকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।

“না হলে, যে কোনো সময়ে আমরা ব্যারেজ বানাবো। আর, সেটা নিয়ে খেলা হবে। সে সুযোগ যাতে না থাকে।”

টিপাইমুখ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেখানেই কাজ করুক, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করতে হবে।”

বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান এবং বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আলোচনা করছি। আমরা বিনিয়োগ করবো। আমাদেরও শেয়ার থাকবে।

“মিয়ানমার থেকে তিনটা নদী এসেছে। সেখানেও যৌথ উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।”

নদী রক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নদীগুলো আমাদের শিরা-উপশিরা। এগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

“নদীগুলো যে সাগরে যাচ্ছে- এই যাওয়ার পথ হচ্ছে বাংলাদেশ।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই নদীগুলো হিমালয়ে উৎপত্তি হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, “আমরা ভাটি অঞ্চলের। এখানে সম্ভাবনাও আছে। অসুবিধাও আছে। আবার, উজানে বাঁধ দিলে আমাদের অনেক সমস্যা তৈরী হয়।”

বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চার শতাধিক নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে ৫৭টি হচ্ছে আন্তঃ সীমান্ত নদী, যার ৫৪টি ভারত এবং ৩টি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ সব নদ-নদীর অধিকাংশই গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকাভুক্ত।

১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি ঐতিহাসিক গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নদীগুলোর পানি বণ্টনের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়।

তিনি বলেন, “অনেকে এই নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নালিশও করেছে। পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি।”

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এসময় পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, পানিসম্পদ সচিব জাফর আহমেদ খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ