এরশাদ সহজাত মিথ্যাবাদী: বি. চৌধুরী
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে সহজাত মিথ্যাবাদী (কম্পালসিভ লায়ার) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘শুধু নিজ দলের লোকজনের সস্তা হাততালি পাওয়ার জন্য কতখানি নিচে নামা সম্ভব তা গত শনিবার দেওয়া এরশাদের উক্তি থেকে আবারও প্রমাণিত হয়েছে।’
রোববার সাবেক এই রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে শনিবার রাজধানীতে যুব সংহতির সাধারণ সভায় এরশাদ বলেছিলেন, ‘জিয়া হত্যা নিয়ে ব্লেমগেম চলছে। আমি জানি, জিয়া হত্যার সময় তার রুমের পাশে কে ছিলেন। তাদের নিয়ে খালেদা জিয়া ২০ বছর রাজনীতি করছেন।’
এরশাদের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বি. চৌধুরী বলেন, ‘এরশাদের এই বক্তব্য মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও বিরোধী দলের যুগপৎ সদস্য (যা পৃথিবীতে ব্যতিক্রম) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যুব সংহতির সভায় দেওয়া বক্তব্যের একটি অংশের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এরশাদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি আমার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার দিন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তাঁর কক্ষের অপর দিকের কক্ষে আমি একা ছিলাম না। ওই কক্ষে আমার সঙ্গে অন্য বিছানায় তৎকালীন জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী সিলেটের মহিবুল হাসানও ঘুমিয়ে ছিলেন। এ ছাড়া আমাদের পাশের কক্ষে ছিলেন আরও এক মন্ত্রী ড. আমিনা রহমান। তারপরের কক্ষে ছিলেন নিজাম চৌধুরী নামে বিএনপির এক শ্রমিকনেতা। সুতরাং, পাশের ঘরে আমি একা ছিলাম না এটাই সঠিক বক্তব্য। ওই সব ব্যক্তির কারও কথা এরশাদের স্মরণে নাই।
বি. চৌধুরী বলেন, ‘যদিও আমি ও মুহিবুল হাসান উভয়েই সরকার গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। ওই কমিটি তাদের তদন্তে ঘটনার সঙ্গে আমি বা মুহিবুল হাসানের কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাননি। সুতরাং, এত দিন পর এরশাদ আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ হয়।’
এরশাদ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আবদুস সাত্তারকে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এরশাদ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আবদুস সাত্তারকে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। জিয়া হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ লাভ পেয়েছেন এরশাদ, অন্য কেউ নয়।’
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এরশাদের হয়তো স্মরণে নেই, রাষ্ট্রপতি জিয়া নিহত হওয়ার পর এরশাদ আমাকেও টেলিফোন করেছিলেন, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমি তাকে স্পষ্টভাবে উত্তর দিয়েছিলাম যে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ সম্পর্কে কোনো সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনা করব না।’
সঠিক বিচার হলে জেনারেল মঞ্জুর ও জেনারেল জিয়া হত্যার ব্যাপারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এরশাদ পরবর্তী পর্যায়ে ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তখন আমার বিচার করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি কেন? বিদেশি সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের লেখাতেও (প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত) মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের বিবরণীতেও স্পষ্ট বোঝা যায়, মঞ্জুরকে যারা হত্যা করেছে সেই চক্রের প্রথম নাম জেনারেল এরশাদের। কেন জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়েছিল, তার কারণ মাত্র একটি। আর তা হলো জেনারেল মঞ্জুর বেঁচে থাকলে জিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এরশাদের সংশ্লিষ্টতা নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে যেত।’