র্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেফতার আদেশের অনুলিপি পুলিশ সদর দফতরে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পুলিশ সদর দফতরে পৌছেছে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায় চাকরি হারানো র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে হা্ইকোর্টের আদেশের অনুলিপি।
রোববার রাত ৯ টার দিকে ফ্যাক্সের মাধ্যমে আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বলে এবিসি নিউজ বিডিকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আদেশের অনুলিপি পাঠানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আদেশে বিচারপতিদের স্বাক্ষরসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
এর আগে রোববার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে পুলিশের মহাপরিদর্শককে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো বিশেষ আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে হবে।
গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় আইনের ঘাটতি সংশোধনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদী স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের পর ওই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, ‘ইতিপূর্বে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিল। সে সময় ওই তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়টা থাকলে ওই বেঞ্চই তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিত। আমরা নতুন এ বিষয়ে আদেশ দিলাম। কারণ কিছু পাওয়া না গেলে তো তাদের বরখাস্ত করা হতো না।’
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে সকালে এই রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদাতল এ আদেশ দেন।
নিহত চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর নির্বাহী সভাপতি মাহবুবুর রহমান এই রিট দায়ের করেন।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।
এঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে দুজনকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
হত্যাকান্ডের পর থেকে নূর হোসেন পলাতক রয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ব্যাক্তিগত মাইক্রোবাসটি এবং তার ভাইয়ের একটি গাড়ী উদ্ধার করেছে।
ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাইদ মোহাম্মাদসহ সামরিক বাহিনীর তিন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাকি দুই কর্মকর্তা হলেন- মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানা।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের দুই থানার ওসি, ৪০ জন উপ পরিদর্শক (এসআই) এবং ৩৯ জন সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) কে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জে বদলী করেছে পুলিশ সদর দফতর।
উল্লেখ্য, ২৭ এপ্রিল ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে নাসিকের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাতজনকে আলাদাভাবে অপহরণ করা হয়। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতালক্ষ্যা নদী থেকে অপহৃত ছয় জন এবং এর একদিন পর আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।