গুম-খুনে বিএনপিকে জড়াতে আ’লীগের মতবিরোধ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ অব্যাহত গুম-খুনে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দলটির কোনো কোনো নেতা নারায়ণগঞ্জে খুনের ঘটনায় বিএনপির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ এ ঘটনায় বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অপচেষ্টা আবিষ্কার করছেন।
তবে কেউ কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের কারও মতে, এ খুনের দায় সরকার এড়াতে পারে না। আবার কারও মতে, এ খুনের ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে সরকার পার পাবে না। একই ইস্যুতে সরকারি দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিব্রত খোদ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন, দলীয় কর্মীদের বেপরোয়া আচরণে সরকারের সব অর্জন হুমকির মুখে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকেও তারা আগের মতো অস্বীকার করছেন না।
ক্রমবর্ধমান গুম-খুনের দায় এড়াতে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর জন্য শীর্ষনেতাদের বক্তব্যের সঙ্গেও সবাই একমত নন। দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রায়ই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা ও সংশয়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মনে করেন, গুম-অপহরণের দায় সরকার এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু সরকারে আছি, তাই আমরা দায় এড়াতে পারি না। জনগণ আতঙ্কে থাকলে সরকার নির্বিকার থাকতে পারে না। সরকার জনগণের আতঙ্কের অংশীদার।’
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে শুধু বিএনপি-জামায়াতকে দোষ দিয়েই পার পাওয়া যাবে না। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় কি পার পাওয়া গেছে? কার মুখ বন্ধ করবেন? আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে।’
তবে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ মনে করেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় বিএনপির সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে। খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের নেত্রী। গুম-খুনে তার দলের নেতাকর্মীরা জড়িত।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যারা গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায়- তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
একইভাবে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতেই নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য গোঁ ধরেছেন খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি হবে। এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। কিন্তু বেগম জিয়া এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের পরস্পবিরোধী বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে খুনের ঘটনায় তদন্ত চলছে। এ সময় ব্লেম-গেম থেকে সরে দায়িত্বশীল কথা বলা উচিৎ।’
তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রায়ই উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। কিছুদিন আগেও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা চোরাগোপ্তা হামলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না।’