অভিযোগ গঠনকারী বিচারপতিকে চ্যালেঞ্জ করে খালেদার রিট
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নিন্ম আদালতে দুই মামলায় (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্টের) অর্থ আত্মসাৎ এর দায়ে অভিযোগ গঠন এবং ওই আদালতের বিচারপতিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আবেদনটি বিবেচনাধীন থাকা পর্যন্ত নিন্ম আদালতে মামলা দু’টির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশও চাওয়া হয়েছে হাইকোর্টে করা রিটে। খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সোমবার আদালতের সংশিলষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন।
অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, বিশেষ জজ আদালতের বিচারকদের নিয়োগের জন্য গেজেট নোটিফিকেশন জারি করতে হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দানকারী বিচারকের নামে কোনো গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হয়নি। তাই আমরা তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গঠনকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি রিটে অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছি আবেদনে।
আগামী বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
খালেদার বিরুদ্ধে ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে ঢাকার বকসিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসামাঠের অস্থায়ী আদালতে। এ দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২১ মে দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগেও চার্জ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ১৬, ১৭ ও ২০ এপ্রিল শুনানি শেষে ২৩ এপ্রিল রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর ফলে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার দুই দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন বহাল থাকায় বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
গত ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকসিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনে অবস্থিত বহু সংখ্যক আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় ওই ভবন এবং এলাকাটি আদালত চলাকালে জনাকীর্ণ থাকে। তই নিরাপত্তাজনিত কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ওই দুই মামলা পরিচালনার জন্য ঢাকা মহানগরের বকসিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ গত ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। আদেশের গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলা দু’টির অপর ৮ আসামির বিরুদ্ধেও।
ওইদিন খালেদার উপস্থিতিতে মামলা দু’টির চার্জ শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
ওই দিন চার্জ শুনানিতে খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জ গঠন করেন আদালত। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এর আগেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১১ বার চার্জ শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া।
এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২সালে ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলাটির অভিযোগপত্র গত ১৫ জানুয়ারি আমলে নিয়েছেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী, নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি করপরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় হারিস চৌধুরী পলাতক রয়েছেন এবং বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক।
এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী (পলাতক) ও মামুনুর রহমান (পলাতক)।