ওরা গেয়ে উঠলো বিজয়ের গান
- সারাদেশে পাসের হার ৯১.৩৪
- শীর্ষে রাজশাহী বোর্ড , সর্বনিম্ন সিলেট
- মোট জিপি ৫ – ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন
- পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি বেড়েছে
আবদুল হাই তুহিন, রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে কৃতী শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত। দীর্ঘ ২ বছর লালন করা স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটল আজ। ওদের সবার কন্ঠে ছিলো বিজয়ের জয়ধ্বনি আর আকাশ ছোঁয়া আত্মবিশ্বাস। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, নেচে গেয়ে, হৈ হুল্লোল করে, রং ছিটিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠলো মেধাবীরা। ওদের আনন্দ দেখে মনে হয়েছিলো ওরা যেন বিশ্ব জয় করে এসেছে। ওরা সবাই সমস্বরে গেয়ে উঠলো বিজয়ের গান। আনন্দ কেবল ওরা একাই করেননি ওদের আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, বন্ধুবান্ধব এমনকি প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও। কাউকে কাউকে আবার নতজানু হয়ে সালাম করতে ও দেখা গেছে শিক্ষকদের পায়ে। কেউ আবার প্রিয়জনকে মোবাইল ফোনে জানান দিচ্ছিলেন নিজের কৃতিত্বের কথা।
গতকাল শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ছিলো এরকম আনন্দের জোয়ার। এ আনন্দ যেন কখনোই ফুরাবার নয়। কেউ আবার নিজের প্রিয় মানুষকে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়েছেন নিজের কৃতিত্বের কথা। একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করেছেন ভালো ফলাফলের রহস্য ও।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এর আগে সকালে শিক্ষামন্ত্রী গনভবনে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এ সময় সকল বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিবসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার ফলাফলের সব সূচক বেড়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগীতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা শিক্ষার যুগান্তকারী পরিবর্তন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৬০ দিনের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফল প্রকাশ আমাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫৮ দিনে ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, একটি কারিগরি ও একটি মাদরাসা বোর্ডসহ ১০টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৪। গতবারের তুলনায় পাসের হার ২ দশমিক ৩১ বেশি। এবার ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৯৪, চট্টগ্রামে ৯১ দশমিক ৪০, রাজশাহীতে ৯৬ দশমিক ৩৪, যশোরে ৯২ দশমিক ১৯, কুমিল্লায় ৮৯ দশমিক ৯২, বরিশালে ৯০ দশমিক ৬৬ , সিলেটে ৮৯ দশমিক ২৩, দিনাজপুরে ৯৩ দশমিক ২৬, কারিগরি ৮১ দশমিক ৯৭ ও মাদরাসা বোর্ডে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। এর মধ্যে ৮ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ১৪ হাজার ১৩ জন ও কারিগরি বোর্ডে ৫ হাজার ৯৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
গত বছর মোট জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিলো ৯১ হাজার ২২৬ জন। যা গতবারের তুলনায় ৫১ হাজার ৫০ জন বেশি। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ৮ বোর্ডের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বোর্ড।
নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর শতকরা হার, শতকরা পাসের হার, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠানের গড় জিপিএ মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতিটি বোর্ডে সেরা ২০ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। একই মানদন্ডের ভিত্তিতে জেলাভিত্তিকও সেরা ১০টি করে প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে।
এবার ঢাকা বোর্ডে সেরা হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে গত বছরের সেরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভিকারুন নিসা নুন স্কুল।
মাদ্রাসা বোর্ডে সেরা হয়েছে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা। কারিগরি বোর্ডের সেরা খুলনার ইউসেপ মহসিন টেকনিক্যাল স্কুল।
সকাল ১১ টা। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মাঠে শিক্ষার্থী ,শিক্ষক ও অভিভাবকদের পদচারনায় মুখোরিত। ফলাফল জানতে সবার চোখে মুখে এ অন্যরকম ব্যাকুলতা। অবশেষে কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম হোসেন সরকার ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র ক্যম্পাসে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এসএসসি পরীক্ষায় ঈর্ষনীয় ফল অর্জনকারী পরিক্ষার্র্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের স্বপ্নের কথাগুলো।
আমি দেশের সেরা ফলাফল অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানের কৃতী শিক্ষার্থী। আমি অনেক আনন্দিত, অনেক গর্বিত। আমি ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই। ঠিক এভাবেই নিজের কৃতিত্বের কথা জানালেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান। সে জানায় নিয়মিত ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লেখাপড়া করলেই ভালো ফল করা সম্ভব।
খুবই টেনশনে ছিলাম। কিন্তু ফলাফল জানার পর আমার সব টেনশন দূর হয়ে গেছে। আমি অনেক আনন্দিত। আমি ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। কথাগুলো বললেন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপি-এ ৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী জোবায়ের ।
রাতে ঘুমাতে পারিনি । কি জানি কি হয়। ফলাফল পেয়ে এখন খুবই ভালো লাগছে। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন এভাবেই ব্যাক্ত করলেন নাহিদ সুলতানা। সে এবার ভিকারুন নিসা নুন থেকে থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। মেয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়লো তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মা রাশিদা বেগমের মাঝেও।
কথা হলো একই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া তায়েবা, মৌ, সাদিয়া, প্রাপ্তি, নিশাত, মুনমুন, ফাল্গুনী, বিনীতা ও ইফার সঙ্গে। তারা সবাই শান্তির রং সাদা পরে ডাক্তার হয়ে মানুষকে সেবা দিতে চায়। শিক্ষকদের সহযোগিতায় এ ফল হয়েছে বলে জানান তারা সবাই।
১৮ থেকে ২৪ মে উত্তরপত্র পুনঃনীরিক্ষণের আবেদন।
এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনীরিক্ষণের জন্য আগামী ১৮ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল দিয়ে ফল যাচাই করার আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলে ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে আরএসসি (জঝঈ) লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে ফি প্রযোজ্য হবে। ফিরতি এসএমএস এ আবেদন ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে ম্যাসেজে গিয়ে আরএসসি (জঝঈ) লিখে স্পেস দিয়ে ইয়েস লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে নিজ মোবাইল ফোন নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
যে সব বিষয়ে দুটি পত্র (বাংলা ও ইংরেজি) রয়েছে সে সব বিষয়ে একটি বিষয় কোড (বাংলার জন্য ১০১, ইংরেজির জন্য ১০৭) এর বিপরীতে দুটি পত্রের জন্য আবেদন হিসেবে গণ্য হবে এবং আবেদন ফি হিসেবে ২৫০ টাকা লাগবে। একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ছাড়াও www.educationboardresults.gov.bd ঠিকানায় ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে ফলাফল জানা যাবে।
মোবাইল থেকে ফলাফল জানতে মেসেজ অপশনে গিয়ে স্পেস দিয়ে দিয়ে পরীক্ষার নাম (ssc/alim/tec), ইংরেজিতে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর, রোল নম্বর, পাসের সন ২০১৪ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে ফলাফল জানানো হবে।
উল্লেখ্য, এবার এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ের পরীক্ষা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২০ মার্চ শেষ হয়। ২৭ মার্চ পর্যন্ত চলে ব্যবহারিক পরীক্ষা। এবার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং গণিত ছাড়া বাকি ২১টি বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে নেওয়া হয়েছে।