মোদির মন জয়ের চেষ্টা হাসিনা-খালেদার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি প্র্রায়ই আলোচনায় আসে। প্রতিবেশী দুর্বল রাষ্ট্রগুলোও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হতে মরিয়া থাকে। বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন জয়ে উদগ্রীব হয়ে পড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজয় নিশ্চিত জেনেই মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে দিলেন খালেদা জিয়া। দেরী করেননি প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি অভিনন্দন বার্তা পাঠালো বিএনপির শরীক জামায়াত। বার্তা পাঠাতে ভুল করেনি সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টিও। তড়িঘড়ি করে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এনডিএ জোটের বিশাল বিজয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। একই দিন বেলা পৌনে দুইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানিয়েছে, একমাত্র ভারতের সমর্থনেই আওয়ামী লীগ ‘একতরফা নির্বাচন’ করেও ক্ষমতায় আছে বলে বিশ্বাস করে বিএনপি। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচন বা সরকারের পতন ঘটাতে সেই ভারতের সহযোগিতার বিকল্প নেই বলেও মনে করছে দলটি। সে জন্য নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ জন্য দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে জানাশোনা রয়েছে, দলের এমন নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। তবে চেষ্টা করেও ভারতীয় পক্ষের কারো সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির নেতারা। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু একাধিকবার ভারত সফর করেছেন। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরি করতে তিনিসহ আরো কয়েকজন নেতাকে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে তাদের কেউই ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের কারোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসার সুযোগ পাননি। এর একমাত্র কারণ হলো কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসক মিতালী। তবে মোদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার জন্য শীঘ্রই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে প্র্রতিনিধি দল ভারত সফরে যাবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি নেতার মনে করেন, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি থেকে শুরু করে সোনিয়া গান্ধী এবং সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের অরাজনৈতিক প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ ভালো। তবে মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হলে ভারতের কাছ থেকে এত দিন আওয়ামী লীগ যে একতরফা সমর্থন পেয়ে আসছে, তা কিছুটা হলেও কমবে। তাই নরেন্দ্র মোদির ব্যাপারে বিএনপি আশাবাদী। এজন্য বিএনপি ভারত বিরোধীতার কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু তার ভিত্তি হবে সমতা ও সমমর্যাদা। জানা গেছে, তবে নরেন্দ্র মোদির বিজয়ে বিএনপি উচ্ছ্বসিত হলেও নিরাশ নয় শেখ হাসিনার সরাকারও। মোদির বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কায় মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি নেতাদের আগ্রাসী বক্তব্যের প্রতিবাদ করেনি। মোদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তারাও তৎপর। ভারতের নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ভারত সফরে যান। পররাষ্ট্র সচিব সেখানে বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে বিজেপি নেতারাও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেন। বিএনপির উদ্দেশ্যে শুক্রবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিজেপির বিজয়ে উল্লসিত বা উদ্বিঘ্ন হওয়ার কিছুই নেই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক থাকবে। শনিবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভারতে সরকার পরিবর্তন হলেও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কোনো পরির্বতন হয় না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সু-সম্পর্ক, সরকার পরিবর্তন হলেও তা বজায় থাকবে। মন্ত্রী বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার গত মেয়াদে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টা মাথায় রাখা হবে।